প্রবাসেও সক্রিয় প্রশ্ন ফাঁসের চক্র - Dainikshiksha

প্রবাসেও সক্রিয় প্রশ্ন ফাঁসের চক্র

সাহাদাত হোসেন পরশ |

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসকারীদের একটি অভিনব চক্রের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গ্রেফতার এড়াতে ওই চক্রের সদস্যরা বিদেশে বসেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেয়। এরপর টাকার বিনিময়ে সেই প্রশ্ন তাদের সঙ্গে ‘চুক্তিবদ্ধ’ ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রশ্নপত্রের একটি অনুলিপি মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানো হয়। পরে ওই দেশে বসেই নির্বিঘ্নে ফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা একের পর প্রশ্ন ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন গ্রুপে পাঠায়। এরই মধ্যে প্রবাসী চক্রের সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত- এমনই একটি গ্রুপের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশে বসে যারা প্রশ্ন ফাঁস করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

দেশের বাইরে থেকে প্রশ্ন ফাঁসে সরাসরি জড়িত আছে কোনো গ্রুপ- এমন তথ্যে বিস্মিত গোয়েন্দারা। বিদেশে থাকা ওই গ্রুপের সদস্যদের কাছে পরীক্ষার একদিন আগেই প্রশ্ন গিয়েছিল। এতে স্পষ্ট বলা যায়, প্রশ্ন ফাঁসের গভীর জাল বিদেশেও ছড়িয়েছে। এদিকে প্রশ্ন ফাঁসরোধে ছয়টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছে সিআইডি। পুলিশের সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে থেকে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত আছে এমন চক্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এখন মূলত প্রশ্ন ফাঁসের মূল উৎসে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।

পুলিশের ছয় সুপারিশ :আগামীতে যে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ৬টি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আইজিপিকে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। এর অনুলিপি সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরেও পাঠানো হবে। চিঠিতে বলা হয়, প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচিত করা জরুরি। কমিটির সবার নাম-ঠিকানা, যোগাযোগ মাধ্যম, ফোন নম্বরসহ আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। প্রশ্ন ছাপার পদ্ধতি পুরোপুরি অটোমেশনভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কেন্দ্রের প্রয়োজন অনুযায়ী তা নিখুঁতভাবে গণনা করে মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়া প্যাকিং শেষ করতে হবে। প্রশ্ন ছাপার সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের নাম-ঠিকানা, যোগাযোগ মাধ্যম ও ফোন নম্বর গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন ছাপানোর জন্য আলাদা কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন ছাপাতে কপি প্রুফ পেপার ব্যবহার করতে বলা হয়। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য আলাদা আলাদা সিরিয়ালের ব্যবস্থাও করতে হবে; যা প্রতিটি লাইনের মাঝে থাকবে। এতে কোনো প্রশ্নের ছবি তোলা হলেও, কোন প্রশ্নের ছবি তোলা হয়েছে তা স্পষ্টই বোঝা যাবে। প্রশ্ন ছাপানোর জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়ার জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। ছাপাখানার দায়িত্বে কোন কর্মকর্তা থাকবেন তা নির্ধারিত হবে প্রশ্ন ছাপার ৩০ মিনিট আগে। প্রশ্ন ছাপা হওয়ার পরপরই স্বচ্ছ প্লাস্টিক বক্সে এমনভাবে সিলগালাযুক্ত করা হবে যেন তা একবার খোলা হলে দ্বিতীয়বার আর লাগানো না যায়। প্রশ্ন পরিবহনে মেডিকেল কলেজে পরীক্ষার সময় নেওয়া ব্যবস্থা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ওই ব্যবস্থার মতো প্যাকেটের সঙ্গে বিশেষ ডিভাইস থাকবে। যাতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির বাইরে কেউ প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুললে তা শনাক্ত করা যায়। প্রশ্নপত্র পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ডিসি, এসপি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে টিম থাকবে। যারা জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র পরিবহনে সহায়তা করবেন। দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রশ্ন বুঝে নেবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা টিম থাকবে। পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত নন এমন কোনো ব্যক্তি কেন্দ্র বা আশপাশ এলাকায় ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে না। যিনি প্রশ্ন গ্রহণ করছেন তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে প্রশ্নপত্রে পরিবহনে ব্যবহূত সিলগালা, ট্যাগ বা ওয়ানটাইম বক্স সঠিক আছে কি-না। ভাঙা সিলযুক্ত বক্স পেলে তা গ্রহণে বিরত ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথাও বলা হয়েছে।

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্তত ১৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতা নন। গ্রেফতার অধিকাংশই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতাদের গ্রেফতারে এখনও পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। তবে পুলিশ-র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে তারা এমন কিছু গ্রুপের খোঁজ পেয়েছেন তাদের ধরা গেলে প্রশ্ন ফাঁসের উৎস বের করা সহজ হবে। গোয়েন্দারাও বলছেন, রাজধানীসহ সারাদেশে এমন ধরনের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য মিলেছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু চক্র এখনই আগাম ঘোষণা দিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। অনলাইনে তারা এমন ঘোষণাও দিচ্ছে যে, ‘সব পরীক্ষার প্রশ্ন আগাম দেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করুন’। পুলিশ বলছে, এসএসসির প্রশ্ন যারা ফাঁস করেছে বা যে চক্র এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।

র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে একাধিক দল কাজ করছে। কিছু গ্রুপ এরই মধ্যে শনাক্ত হলেও মূল হোতাদের ধরা যায়নি।

 

সৌজন্যে: সমকাল

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041320323944092