কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ডিগ্রি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি, রেজুলেশন ও প্রবিধান উপেক্ষা করে একই কলেজের মো. জাকির হোসেন নামে এক প্রভাষককে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ অনিয়মের বিষয়ে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই কলেজের সভাপতির নিকট দুই দফা চিঠি দেয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে কলেজটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেনকে পরিবর্তন করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা গেছে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন গুণবতী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পদে একই কলেজের ৩ জন শিক্ষকসহ ১২ জন প্রার্থী আবেদন করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরিতে নিয়োগ শর্তাবলীর আলোকে প্রার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে পাস করতে হবে। এছাড়া অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর ১০ থাকতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর না পেলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
কিন্তু গুণবতী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে লিখিত পরীক্ষায় ৮ নম্বর পাওয়া অকৃতকার্য প্রার্থী মো. জাকির হোসেনকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় এবং মৌখিক পরীক্ষায় তাকে সর্বোচ্চ ১১ নম্বর দিয়ে প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ দেখিয়ে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে উপাধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্ত করে সরকারি বেতন-ভাতাদি পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। ওই পদে লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ১৩ নম্বর পাওয়া মনির হোসেন নামের এক প্রার্থীকে দ্বিতীয় ঘোষণা করা হয়।
অবৈধভাবে এমন নিয়োগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে প্রার্থী মনির হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে। মাউশি-কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালকের কার্যালয় থেকে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘জাকির হোসেনের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৫ মোতাবেক বৈধ হতে পারে না এবং এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’ এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়।
এরপর কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেনকে উপাধ্যক্ষ পদে মো. জাকির হোসেনের অবৈধ নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখা-৬ কর্তৃক প্রেরিত পত্র মোতাবেক অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রামান্য কাগজপত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করার জন্য দু’দফা পত্র দেয়া হয়।
জানা গেছে, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই পত্রে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেনকে পরিবর্তন করা হয়। একই তারিখে কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে ওই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয় এবং উপাধ্যক্ষ পদে বিধি বহির্ভূতভাবে জাকির হোসেনের নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করার জন্য বলা হয়।
এদিকে, অবৈধভাবে এ ধরনের নিয়োগের ঘটনায় কলেজের শিক্ষক-অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কলেজ সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর জানান, ‘বিষয়টির তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’