সোনাগাজী সিনিয়র ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা শুধু নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেননি। ওই মাদরাসার আরো অনেক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তার হাতে। ছাত্রীদের হেনস্তা করা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মাদরাসার আয়াকে শ্লীলতাহানি, ছাত্রকে বলাত্কার করা, চাচাতো ভাইকে হত্যাচেষ্টা, মাদরাসা থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ এমন কোনো অপকর্ম নেই তিনি করেননি। শিক্ষকরূপী এই পশু সব কুকর্ম করেও পার পেয়ে যেতেন প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ছিলেন জামায়াতের রোকন। নানা অপকর্মের কারণে জামায়াত থেকেও বহিষ্কার হন।
সোনাগাজী সিনিয়র ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই জামায়াতের রাজনীতি করেন। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা বেছে বেছে জামায়াতের লোকজনদের চাকরি দিতেন।
জামায়াতের নেতা হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে অর্থ লোপাট করতেন তিনি। স্থানীয় নেতাদের দিতেন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা। মাদরাসা পরিচালনা কমিটিতে রেখেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে। তার ছত্রছায়ায় নারী পিপাসু সিরাজ উদ দৌলা পেতেন বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। মোটা অঙ্কের অর্থ দিতেন সিন্ডিকেটের নেতাদের। ওই নেতা গ্রাম ছেড়ে এখন ঢাকায় আত্মগোপনে আছেন। তিনি বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সোনাগাজী সিনিয়র ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সঙ্গেই রয়েছে একটি বিশাল মার্কেট। প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা ওঠে ওই মার্কেট থেকে। সেই টাকা অধ্যক্ষ ও সিন্ডিকেটের নেতারা লুটপাট করে। এভাবে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে অপকর্ম চালাতেন অধ্যক্ষ।
অধ্যক্ষ কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে নুসরাত থানায় মামলা দায়ের করতে গিয়েও পুলিশ কর্তৃক অপমানিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। নুসরাতের কোথায় কোথায় অধ্যক্ষ হাত দিয়েছে ভিডিওতে পুলিশকে সেটা জিজ্ঞেস করতে দেখা গেছে। অথচ সেখানে কোনো নারী পুলিশ ছিল না। ফলে থানায় গিয়েও বিচার পায়নি নুসরাত।
নারী পিপাসু ওই অধ্যক্ষের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। তারা অধ্যক্ষসহ স্থানীয় ওই সিন্ডিকেটের নেতাদেরও বিচার দাবি করেছেন।
নুসরাত হত্যা মামলা তদন্ত করছে পিবিআই। পিবিআইর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, আমরা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করবো। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তে নেমেছি।