প্রযুক্তির ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

প্রযুক্তির ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কালের পরিক্রমায় আমরা এখন আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছি। মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সময়ের প্রয়োজনে আবিষ্কার হয়েছে কত-শত বিস্ময়। বাবার দেওয়া খেলনা হেলিকপ্টার থেকে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখে সেটার বাস্তবায়ন করেছিলেন রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। সোমবার (১৮ নভেম্বর) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে  আরও জানা যায়, দূরবর্তী স্থানে কথোপকথনের জন্য আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন উদ্ভাবন করেছিলেন। প্রযুক্তির যত উদ্ভাবন সবই করা হয়েছে মানুষের মৌলিক প্রয়োজনে, মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের জন্য।

কোনো উদ্ভাবক বা আবিষ্কারক কখনো তার উদ্ভাবন খারাপ কাজে বা মানুষের অকল্যাণে ব্যবহার হবে—এই ভাবনা নিয়ে কাজ করেননি। বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল ১৮৬০ সালে পাথর ভাঙার সহজ উপায় খুঁজতে গিয়ে নাইট্রো-গ্লিসারিনের সঙ্গে সিলিকার মিশ্রণে একধরনের পেস্ট তৈরি করেন, যা ডিনামাইট নামে পরিচিত।

আলফ্রেডের উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে সফল হলেও পরবর্তীকালে লক্ষ্য করলেন, যে কাজের জন্য তিনি ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন, সে কাজের বদলে মানুষ বরং অপর মানুষকে পঙ্গু এবং হত্যা করার জন্যই তা বেশি ব্যবহার করছে। এটা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, কোনো উদ্ভাবন ভালো বা খারাপ কাজে ব্যবহার হওয়াটা পুরোপুরি নির্ভর করে তার ব্যবহারকারীদের ওপর।

বর্তমানে স্মার্ট ডিভাইস এবং ইন্টারনেট পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই প্রযুক্তির ব্যবহারে।

স্মার্ট ডিভাইস এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই মানুষ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বা ফাইল স্থানান্তর, ঘরে বসেই বিদ্যুত্ বিল, গ্যাস বিল, পরীক্ষার ফি, ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান, অনলাইন শপিং, বাস-ট্রেনের টিকিট কাটা, অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধাসহ নানাবিধ সেবা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করছে।

তথ্যপ্রযুক্তির সর্ববিধ ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যেমন গতি এনেছে, তেমনি এটির অপব্যবহার তরুণ প্রজন্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে মধ্য বয়স্ক এমনকি পঞ্চাশোর্ধ প্রবীণরাও এখন স্মার্টফোনে আসক্ত।

আমার সঙ্গে আপনিও সহমত হবেন যে, বর্তমানে শিশুরা পর্যন্ত মোবাইল বা কম্পিউটারে গেম খেলতে বেশ পটু। গেম খেলতে না দিলে খাবার খাব না, ঘুমাতে যাব না ইত্যাদি নানা কৌশলে বাবা-মা কে ব্লাকমেইল করে। বাবা-মা বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার করতে দিচ্ছে।

দেশের সর্বাধিক ভিজিটেড এবং জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে গুগল, ইউটিউব এবং ফেসবুক। ফেসবুক এবং ইউটিউবকে বর্তমানে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফলে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একধরনের মহামারি ভাইরাসে পরিণত হয়েছে। ১০ মিনিটের জন্য ফেসবুকের নোটিফিকেশন এবং নিউজ ফিড ঘুরে আসতে গিয়ে ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টের না পাওয়া, ইউটিউবে ছোটো একটি ভিডিও ক্লিপ দেখতে গিয়ে সাজেস্টেড অন্য ভিডিওতে ক্লিক করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ হয় না।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় হাতে মোবাইল নিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করার ফলে শিক্ষার্থীরা পরিপূর্ণ ঘুমের তৃপ্তি পায় না। ফলে তাদের শারীরিক সক্রিয়তা হ্রাস পেয়ে শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে।

ভার্চুয়াল জগতের এই আসক্তির কারণে খেলার মাঠের সেই হইচই এখন আর দেখা যায় না, সামাজিক বন্ধনগুলোও এখন বড়ো বেশি প্রাণহীন। প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার তরুণ প্রজন্মকে রক্ত-মাংসের রোবটে পরিণত করছে।

প্রতিটি নতুন প্রযুক্তি পণ্য যখন বাজারে আসে, তখন তার ফাংশনগুলোর ব্যবহার সম্পর্কিত কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেটাকে ‘ইউজার ম্যানুয়াল’ বলা হয়। কিন্তু সেটা কতক্ষণ ব্যবহার করবে, কোন সময় ব্যবহার করবে, ভালো কাজে নাকি খারাপ কাজে ব্যবহার করবে, সেটা নির্ভর করে শুধু ব্যবহারকারীদের ওপর।

স্মার্ট ডিভাইস এবং ইন্টারনেট এই দুইয়ের সংমিশ্রণ তরুণ প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে আসক্ত করে ফেলেছে। ফলে উপকার অপেক্ষা ক্ষতির মাত্রাটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প কিছু হতে পারে বলে মনে করি না।

এ কথাও বলা আবশ্যক যে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ধারা ব্যাহত করে আমাদের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধু এর কলুষিত দিকগুলোর যাতে বিকাশ না ঘটে সে জন্য সব মহলের একান্ত নজরদারি আবশ্যক।

লেখক : ইয়াছির আরাফাত, শিক্ষার্থী, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040440559387207