ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় গেল বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার ও কঠোর নজরদারি করে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতাদের। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বের হয়ে আসে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানা তথ্য। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সে মোতাবেকই কাজ করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগ, সিআইডি’র সাইবার পুলিশ ব্যুরো এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে প্রশ্নপত্র ফাঁস। শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকদের মধ্যে বেশ স্বস্তিও আসে। কিন্তু হালে কৌশল পাল্টিয়ে ফের সক্রিয় হয়েছে চক্রের হোতারা। আগে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তাদের অনেকেই এখন জামিনে রয়েছে।
যুক্ত হয়েছে একই অপরাধের সঙ্গে। চলতি বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তারা সক্রিয় হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে গ্রুপ তৈরির কাজ করছে। আশ্বাস দিচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, এসএসসি ও এইচএসসি’র ফাইনাল পরীক্ষা এমনকি বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরসহ সংগ্রহ করতে পারবে। এক্ষেত্রে গুনতে হবে বড় অংকের টাকা।
সূত্র মতে, গত বছরের পরিস্থিতি খুব সুখকর না থাকায় এ বছর আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা শুরু করেছে। বেশকিছু চক্রের সদস্যদের ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শতাধিক অ্যাকাউন্ট সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তাদের গতিবিধি। কারণ ইতিমধ্যে প্রশ্ন ফাঁসকারীরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় তাদের উপস্থিতি ছিল। বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের তৎপরতা জানান দিয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র সরবরাহের তথ্য দিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানে আর সম্ভব হয়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা অনলাইন ও অফলাইনে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ মনিটরিং করছি। ফেসবুক, ইমু, ভাইভার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য ইঞ্জিনগুলো গোপন এজেন্টের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ যারা করে তারা সবসময় নিত্য-নতুন কৌশল অবলম্বন করে। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ৫ই অক্টোবর দেশব্যাপী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে একটি চক্র ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে। এ ধরনের পোস্ট দিয়ে প্রশ্নপত্র সরবরাহের খবর ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। চক্রের সদস্যরা বেশকিছু গ্রুপ তৈরি করেছে। একেকটি গ্রুপে ৫০০/৬০০ করে সদস্য রয়েছেন। গ্রুপ এডমিনরা তাদের নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের শিক্ষার্থী দাবি করছেন। যদিও বাস্তবে এ রকম কোনো সত্যতা পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় এ রকম কয়েকটি চক্র বেশ তৎপর হয়ে উঠেছিলো।
সিআইডি’র সাইবার পুলিশ ব্যুরো ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে গতবছর থেকে আমরা বেশ গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছি। এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। এদের মধ্যে অনেকে আছে যারা ডিভাইস আমদানি করে। তিনি বলেন, যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে তারা মূলত প্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে। আর যদি কোনো কারণে প্রেস থেকে সংগ্রহ করতে না পারে তবে কৌশলে ভেতরের লোকদের দিয়েই বের করে নিয়ে আসে। আমরা গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর আগে থেকেই কাজ শুরু করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের টিম সিভিলে উপস্থিত থেকে নজরদারি করছে। এছাড়া আমাদের সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে নজরদারিতে রেখেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অবস্থান ও গতিবিধি জানার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কিছু চক্রকে টার্গেট করে কাজ করেছি। কয়েকদিন আগে ৫ জনকে গ্রেপ্তারও করেছি।
সৌজন্যে: মানবজমিন