প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত কোচিং থেকে মেডিকেলে চান্স পেল ২৮০ জন - দৈনিকশিক্ষা

প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত কোচিং থেকে মেডিকেলে চান্স পেল ২৮০ জন

খুলনা প্রতিনিধি |

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র কারসাজিতে অভিযুক্ত খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার থেকে এ বছর (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) মেধা তালিকায় দ্বিতীয়সহ ২৮০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। এতে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জেনে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন বলছে, থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. তারিমের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পরে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে ওই কোচিং থেকে ২৮০ জন বিভিন্ন সরকারি মেডিলেকে চান্স পেয়েছে বলে জানা যায়।

থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ইউনুস খান তারিম  বলেন, অতীতের ন্যায় আমাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছি। এবার আমাদের কোচিং থেকে ২৮০ জনের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) চান্স পেয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মেধা তালিকায় দ্বিতীয়, ১৯তম, ২০তম ও ৩২তম হয়েছে আমাদের কোচিংয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত বছর (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার থেকে কোচিং করেছেন এমন ২৮ জন ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। মোট ২৭৩ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৮ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ৮৬ জন ঢাকার অন্য চারটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

এর আগের বছর ওই কোচিং সেন্টার থেকে বিভিন্ন মেডিকেলে ২৬৪ জন ভর্তি হয়েছিলেন। প্রতি বছরই সরকারি মেডিকেলে এখানকার শিক্ষার্থীদের ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

অবশ্য বিভিন্ন ধরনের প্রচারণামূলক পোস্টার ও কোচিংয়ের লিফলেটে নিজেকে ৪০০০ ডাক্তার গড়ার কারিগর হিসেবে দাবি করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. ইউনুস খান তারিম।

তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে কারসাজি করে কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। খুলনা মহানগরের কেন্দ্রস্থলে ফুল মার্কেটের কাছে একটি বহুতল ভবনে এ কোচিং সেন্টার। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কারসাজি করে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে এ কোচিং সেন্টার জড়িত। এর মালিক ইউনুস খান তারিম একজন সরকারি চিকিৎসক। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার।

এ অবস্থায় ১০ অক্টোবর খুলনা শহরে মেডিকেল কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসে অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন। দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া এমন কিছু শিক্ষার্থী সম্পর্কে শিক্ষকরা বলেছেন, মেডিকেলে পড়ার ন্যূনতম মানও তাদের নেই। ভর্তি পরীক্ষায় কীভাবে তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে এক প্রতিবেদনে দিয়ে বলেছে, খুলনার এ কোচিং সেন্টার ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে ‘মেধাহীন’, ‘অযোগ্য’ ছাত্রছাত্রীদের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে। জনপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এ ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে বছরে শতকোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেন হয়।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে কিছু শিক্ষার্থীর ফলাফল বিবরণীর বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়, যারা থ্রি ডক্টরসে কোচিং করেছেন। তাতে দেখা যায়, তারা কেউ এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি। তবে ভর্তি পরীক্ষায় ৭৩ করে নম্বর পেয়েছেন। একজন ৭৩.২৫ নম্বর পেয়েছেন।

মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের পড়াশোনা ও জ্ঞান এত নিম্নমানের যে তারা কীভাবে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার মতো কঠিন পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন, তা বোধগম্য নয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুগদা মেডিকেলে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১২ জন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ২১ জন ভর্তি হন, যারা খুলনার ওই কোচিং সেন্টারে কোচিং করেছেন। তাদের লেখাপড়ার মানও অত্যন্ত নিম্ন। শিক্ষকদের আশঙ্কা তারা কোনো কারসাজির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন।

১০ অক্টোবর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কারসাজির অভিযোগে থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. ইউনুস খান তারিমকে আটক করে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান হোসেন খান ওই দিন বেলা ১১টার দিকে নগরীর ফুলমার্কেট এলাকায় ডা. তারিমের মেডিকেল ভর্তির কোচিং সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যান। এ সময়ে কোচিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক জব্দ করা হয়।

ওই দিন বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার এক মাস আগ থেকে সব ভর্তি কোচিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে থ্রি ডক্টরস কোচিং খোলা রাখা হয়েছিল। এছাড়া ইউনুস খান তারিম একজন সরকারি চিকিৎসক। কর্মস্থলে না থেকে কোচিং সেন্টারে সময় দিচ্ছিলেন তিনি। তার কোচিং সেন্টারের কোনো নিবন্ধন নেই। এসব কারণে তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে মেডিকেল অফিসারের পদ থেকে বরখাস্ত করা এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সুপারিশ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার থেকে এ বছর ২৮০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ডা. তারিমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়জনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে একসঙ্গে এক কোচিং সেন্টার থেকে এত শিক্ষার্থীর চান্স পাওয়ার বিষয়টি আশ্চর্যের।ে

এদিকে গত তিন দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং ইউসিসির বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসহ নানা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেলেও তার শাস্তি হয়না। কতিপয় জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনে নিয়মিত বিজ্ঞাপন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মচারী সমিতির বার্ষিক পিকনিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা দেয়ার অভিযোগ ইউসিসির বিরুদ্ধে। 

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038919448852539