প্রসঙ্গ এইচএসসির ফল প্রকাশ - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ এইচএসসির ফল প্রকাশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যদি ভর্তি পরীক্ষা বহাল থাকে তাহলে আসল সোনা ও নকল সোনার ব্যবধান সেখানেই নিরূপণ হবে। বিদেশে ভর্তির ব্যাপারে এসব নম্বরকে নয় বরং স্যাট বা জি আর স্কোর এবং প্রশংসাপত্রকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। বৃত্তি নির্ধারণও সে ভিত্তিতে হয়ে থাকে। অতএব বিদেশ গমন প্রত্যাশীদেরও চিন্তিত না হলে চলবে। তবে বিদেশে পড়াশোনার ব্যাপারটি সাম্প্রতিককালে অনেক উদার এবং করোনা সংকট সেটাকে আরো উদার করতে বাধ্য। বুধবার (১৪ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের মাথা ও বিজ্ঞ-অভিজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বিগত ৭ অক্টোবরের (২০২০) এই ঘোষণায় ভবিষ্যতে উদ্ভবতব্য কিছু সমস্যা ও সেসবের সমাধানের কথাও তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। প্রায় ৩৪ মিনিটের এই প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক ছাড়াও চ্যাটে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বহুবিধ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে; যার জবাব শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দিয়েছেন। তন্মধ্যে এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপে স্থানান্তরকারী, বিভাগ পরিবর্তনকারী ও ফলাফল উন্নয়ন প্রত্যাশীসহ অনেকের কিছু সমস্যা ও সেসবের সমাধানে টেকনিক্যাল কমিটি বা পরামর্শক কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে।

পরামর্শক কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আরো থাকতে পারে এমন কিছু শিক্ষার্থী যারা অসুস্থতা বা দৈব-দুর্বিপাকে জেএসসি বা এসএসসিতে ভালো ফল করতে পারেনি; সেটা পুষিয়ে নিতে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য উত্তম প্রস্তুতি তাদের ছিল। বিশালসংখ্যক এইচএসসি শিক্ষার্র্থীর তুলনায় তাদের সংখ্যা অবশ্য নগণ্য। এই নগণ্যদের একজন তার আইনজীবীর মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বর্ণিত ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে তা তিন দিনের মধ্যে বাতিলের নোটিস দিয়েছে। কথিত শিক্ষার্থী ও তার আইনজীবী বিকল্পের কথা বলেননি। অনুমান করা যাচ্ছে যে তারা গতানুগতিক এইচএসসি পরীক্ষাই চাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে মনে হয় সামান্য কিছুসংখ্যক স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ ছাড়া বাকিরা শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়ে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, ফেডারেশন ও বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক সমিতি পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছে।

প্রাপ্ত বাস্তবতায় একটি শিশুও অনুভব করছে যে বর্তমান সময়ে এবং আগত প্রায় ছয় মাস সময়ে গতানুগতিক ধারায় পরীক্ষা নিলে করোনায় সারাদেশটা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কোনো দায়িত্বশীল সরকার এমন কাজটি করতে পারে না। আবার বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীদের বসিয়ে রেখে ব্যাপক সামাজিক সমস্যা লালনও কাম্য নয়। কাম্য নয় উচ্চ মাধ্যমিকের কয়েক লাখ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে অনিশ্চিত বেকারত্বের নিপতিত রাখা বা দেশের বিশ^বিদ্যালয় বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্তিত্ব সংকটের দিকে উত্তরোত্তর ঠেলে দেয়া। তারপরে আইনি নোটিসদাতাদের জন্য একটি বিকল্প অবশ্য আছে।

বিকল্পটি হচ্ছে ওপেন বুক সিস্টেমে সবার পরীক্ষা নেয়া। এটা কার্যকর করতে গেলে অনেক অসুবিধা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তারপরেও আমি এই ওপেন বুক সিস্টেমকে নাই মামার চেয়ে কানা মামা বলছি। চাকরির বাজারে ১৯৬২ সালের অটোগ্র্যাজুয়েটরা যখন অনায়াসে স্থান করে নিতে পেরেছে; তখন এবারে বিনা পরীক্ষায় মাধ্যমিক সনদধারীরা পরবর্তী সনদ সংযোজনের মাধ্যমে চাকরির বাজারে সংকটে পড়বে বলে মনে হয় না।

প্রস্তাবিত ওপেন বুক সিস্টেমে কোনো নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র থাকবে না। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর আবাসনস্থলই হবে এক একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। সেখানে তারা বই খুলে হোক বা অন্যের সাহায্য নিয়ে হোক নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা দিতে পারবে এবং নির্ধারিত সময়ে নিকটবর্তী যে কোনো কলেজে উত্তরপত্রটি জমা দিতে পারবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা আছে, যথাযত সামলিয়ে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ফলাফলও ঘোষণা করা যাবে।
এই ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো উত্তরপত্র সরবরাহ করা হবে না। পরীক্ষার্থী নিজেই তার নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, পরীক্ষার গ্রুপ ও কলেজের নাম উল্লেখ করে উত্তরপত্র বানিয়ে নেবে। এই উত্তরপত্র প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ কোনো একটি কলেজে উত্তরপত্রটি সিলগালা করে বোর্ডে পাঠিয়ে দেবে।

এই ব্যবস্থায় মেধাবীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে অভিজ্ঞতার জোরে বলছি বস্তুত ওপেন বুক কিংবা ক্লোজ বুক পদ্ধতিতে মেধাবীদের ক্ষতির মাত্রা নেহাতই কম হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যদি ভর্তি পরীক্ষা বহাল থাকে তাহলে আসল সোনা ও নকল সোনার ব্যবধান সেখানেই নিরূপণ হবে। বিদেশে ভর্তির ব্যাপারে এসব নম্বরকে নয় বরং স্যাট বা জি আর স্কোর এবং প্রশংসাপত্রকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। বৃত্তি নির্ধারণও সে ভিত্তিতে হয়ে থাকে। অতএব বিদেশ গমন প্রত্যাশীদেরও চিন্তিত না হলে চলবে। তবে বিদেশে পড়াশোনার ব্যাপারটি সাম্প্রতিককালে অনেক উদার এবং করোনা সংকট সেটাকে আরো উদার করতে বাধ্য।

এইচএসসি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের কথাটা ভাবতে হবে, তারাও অধিক হারে চাকরিতে ঢুকবে কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের ও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গামী হবে।

শিক্ষামন্ত্রীর প্রেস ব্রিফিং থেকে একটি বিষয় আমাকে আশ্চর্যান্বিত করেছে। এখন সামাজিক মাধ্যমে মত প্রকাশে অবারিত স্বাধীনতা এবং সে মতামত প্রকাশ করা হচ্ছে রোমান হরফে বাংলায়, যার বিরোধিতা আমি ও আমার পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান আমলে নিরন্তর করেছেন। অজ্ঞতাবশত হোক আর প্রবণতাবশত হোক আমরা পাকিস্তানি সংস্কৃতি লালন করছি। এটা সযত্নে পরিহার বাঞ্ছনীয়। পরামর্শক কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি প্রয়োজন, কেননা শিক্ষার্থীদের বিশালাংশ স্থান পাবে ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

লেখক : অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা; ও উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0095920562744141