প্রসঙ্গ কথা : প্রভাষকদের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ কথা : প্রভাষকদের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা

মো. জাহাঙ্গীর আলম |

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা একজন শিক্ষকের দক্ষতা মূল্যায়নের উপযুক্ত মাপকাঠি হতে পারে না। আমার চাকরির আট বছর পূর্ণ হলে আমার দক্ষতা বাড়ুক বা না বাড়ুক আমি ৫:২ অনুপাতে পদোন্নতি পেয়ে যাবো। সেক্ষেত্রে আমার কলেজের সকল শিক্ষকের অনুপাত আমার বিষয়ে আমার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা। অর্থাৎ আমি অর্থনীতির শিক্ষক হলেও অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকরাই আমার দক্ষতা/অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করছে। এই নিয়মটা আমার কাছে কেমন আজব মনে হয়। সরকারি কলেজের শিক্ষকরা সময় হলেই পদোন্নতি পেয়ে যান। 

সর্বশেষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নতুন এমপিও নীতিমালা হয়, যেখানেও এই ৫:২ অনুপাত প্রথাটি থেকেই যায়। শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমানে এটির চূড়ান্ত সংশোধনী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমান নিয়ম অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওভুক্ত হয়ে ২১ জন শিক্ষক থাকলে 8 বছর পর সকল শিক্ষকের দক্ষতা অনুযায়ী ৬ জন পদোন্নতি পাবেন। বাকিরাও একই সময় চাকরি করল, কিন্ত তাদের দোষ তারা হয়তো বয়সে ছোট।

আজব নিয়ম। এটি আমার কাছে সাপ লুডু খেলার মতো মনে হয়। কেউ মইয়ে চড়লে উঠে গেলো আবার কাউকে সাপ খেলো সে পড়ে গেলো। এই বিষয়ে আমার একটি অভিমত আছে যা আমি ব্যক্ত করার জন্যই লিখছি। সেটি হলো- একজন ছাত্র যদি এক বছর পর একটি পরীক্ষা পাস সাপেক্ষে উচ্চতর শ্রেণিতে উঠে তাহলে একজন শিক্ষক কেন নয়? আমার কাছে মনে হয় সরকার যদি পরীক্ষা নিয়ে পদোন্নতি দিতো তাহলে একই সাথে দুটি লাভ। প্রথমত, সরকারের পরীক্ষা থেকে খরচ বাদে যেটুকু রাজস্ব আয় হবে তা দিয়েই পদন্নোতি প্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিরিক্ত ব্যয় মিটানো সম্ভব। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকরা তাদের পদোন্নতির কারণে সবসময় পড়াশুনার মধ্যেই থাকতো। বর্তমানে তা ৫০ শতাংশ হলে তখন তা ১০০ শতাংশ হতো। অর্থাৎ, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের যে ব্যয় তাও কমতো।

পরীক্ষা সরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন এনটিআরসিএ কতৃক ছয় মাস অন্তর অন্তর নেয়া যেতে পারে। এভাবে সরকার পর্যায়ক্রমে প্রভাষক হতে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এমনকি অধ্যাপক পর্যায়েও পদোন্নতি দিতে পারে। তাতে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ আমার স্কিল যদি আমি ১৫ বছরও বাড়াতে না পারি, তাহলে আমি পদোন্নতি না পেলে আমার কোনো আফসোস থাকবে না। কিন্ত বর্তমান নিয়মে কেউ দক্ষ হোক বা না হোক ৮ বছর পর পদোন্নতি। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে এর জাতাকলে কেউ ২০ বছরেও একই পদে বিদ্যমান।

যে শিক্ষকটি অনুপাত প্রথার কবলে পড়ে একই পদে থেকেই অবসর গ্রহণ করল তার দোষ কোথায়? আবার অন্য প্রতিষ্ঠানের যে শিক্ষকটি ৮ বছর পূর্তিতে পদোন্নতি পেল তার দক্ষতা বেড়েছে, না বাড়েনি তার মূল্যায়ন কীভাবে হলো? পদোন্নতিজনিত পরীক্ষা বিষয়ভিত্তিক হলে একজন শিক্ষক সবসময় তার বিষয়টি পড়াশুনার মধ্যেই থাকবে সেক্ষেত্রে ক্লাসেও সে সর্বোচ্চ দিতে পারবে। যেহেতু দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষাব্যবস্থাই বেসরকারি। তাই এভাবে দক্ষতার মূল্যায়ন হলে সরকার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এককথায় সমগ্র জাতি উপকৃত হবে। কারণ শিক্ষাব্যবস্থা যদি সঠিক নিয়মে না পরিচালিত হয় তাহলে তা উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবেই। দীর্ঘমেয়াদি এই নিয়মের ফাঁদে আমরা আটকে আছি।

তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, কোনোভাবে যদি আমার লেখাটি আপনার দৃষ্টিগোচর হয় বিষয়টি একটু ভেবে দেখবেন। কারণ একটি জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আর শিক্ষার উন্নয়ন হতে হলে অবশ্যই শিক্ষকদের জীবনমান পরিবর্তন সর্বাগ্রে হওয়া উচিত।

লেখক : মো. জাহাঙ্গীর আলম, কে.বি.এম কলেজ, দিনাজপুর।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037989616394043