ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কোন পদ্ধতিতে, কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে বা গুচ্ছ ভিত্তিতে পরীক্ষার আয়োজন করলে সব বিশ্ববিদ্যালয় তার মধ্যে আসবে কি না, সে বিয়য়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। যে করোনার কারণে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেই করোনা সত্ত্বেও ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে আয়োজন করা যায়? তাছাড়া ধীরে ধীরে শীতের আগমন ঘটছে। এক্ষেত্রে হয়তো পরীক্ষা আয়োজনের জন্য শীতের পরের সময়টা বিবেচনা করতে হবে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে আয়োজক কমিটি বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে পারে। প্রথম বিবেচনার বিষয় হলো, পরীক্ষাটি কি গুচ্ছ ভিত্তিতে আয়োজন করা সম্ভব হবে? ইতিপূর্বে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে পরীক্ষার আয়োজন করে। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে ঐ সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিদ্ধান্ত বদল করবে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বা না নিয়ে গুচ্ছ ভিত্তিতে পরীক্ষার আয়োজন হলেও পরীক্ষাটি কোনো নির্দিষ্ট জেলায় আয়োজন করা মোটেও সমীচীন হবে না। পূর্বের মতো বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক পরীক্ষার আয়োজন করলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি বাড়বে, আবার করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকির সমস্যাও রয়েছে। সুতরাং আয়োজক কমিটিকে দেশব্যাপী পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে, যাতে লোকসমাগম কম হয়। প্রায় প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক কলেজ রয়েছে। যেহেতু সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অন্য কোনো শাখা নেই, সেহেতু এসব বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক কলেজের সহায়তায় পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয়, মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন দিনে আয়োজন করতে হবে। এছাড়া প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়, মেডিক্যাল ও অন্যান্য বিশেষ বিশেষ পরীক্ষাও ভিন্ন ভিন্ন দিনে আয়োজন করতে হবে। এতে পরীক্ষার কেন্দ্রে ভিড় কম হবে। তৃতীয় বিবেচ্য বিষয়, পরীক্ষার্থীদের সিট প্ল্যান নিজ নিজ জেলায় দিতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের অন্য কোনো জেলায় যাতায়াত করার প্রয়োজন হবে না। যথাসম্ভব প্রতিটি সিটে এক জনের বসার ব্যবস্থা রেখে অধিকসংখ্যক কেন্দ্রে পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে। তবে কেন্দ্রগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক কলেজের কাছে হলে ভালো হবে। এতে নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
পরীক্ষা যেহেতু দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে, তাই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন বা জালিয়াতির চেষ্টা থাকবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য অন্তত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাখতে হবে। কেন্দ্রে ঢোকার মুখে অবশ্যই মেটাল ডিটেকশন যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতি বছর বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করে। প্রায় ৪ লাখ পরীক্ষার্থীর এই পরীক্ষা একই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে স্বচ্ছতা ও প্রশ্নাতীতভাবেই আয়োজন করছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান। সুতরাং দেশব্যাপী একই সঙ্গে পরীক্ষার আয়োজন করা অসম্ভব ব্যাপার নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারে। তাদের সফলতার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে এই বিরাট কর্মযজ্ঞ কেন্দ্রীয়ভাবে গুচ্ছ ভিত্তিতে আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না। তাদের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের ওপর নির্ভর করছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন ও ভবিষ্যত্ জীবন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করবে এ প্রত্যাশা রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা রইল।
লেখক : মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়