সোমবার প্রকাশ পেয়েছে ১০টি শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার ফল। আশানুরূপ ফলে পাসের হার বাড়লেও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ফলের এমন তারতম্য হওয়া তেমন কিছু নয়। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৭.৭৭% এবার পাস করে ৮২.২০%। ২০১৬ সাল থেকে খাতা মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করায় পর পর ২ বছর পাসের হার কমলেও এবার তা বেড়ে যায়। ঢাকা বোর্ডে গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ১.৮৬ শতাংশ কমে যায়। তবে জিপিএ-৫ এর এবারও ঢাকা বোর্ড শীর্ষে। পাসের হারে সর্বোচ্চ স্থান রাজশাহী বোর্ডের, ৯১.৬৪ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য, পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে, যা নারী শিক্ষায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের জীবন গড়ার এক প্রয়োজনীয় সময়, যা জীবনের মোড় ঘোরাতে অন্যতম চালিকা শক্তি। মাধ্যমিকের সফলতা শিক্ষার্থীকে নানামাত্রিকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, তার ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণে সময়োপযোগী ভূমিকা রাখে, সর্বোপরি দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজের অবস্থানকে শক্ত করার সুযোগও তৈরি হয়। এক্ষেত্রে অভিভাবকসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক ম-লীরও যথাযথ ভূমিকা শিক্ষার্থীদের চলার পথকে স্বাভাবিক পরিক্রমায় গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। স্কুল জীবনের পাঠ সাঙ্গ করে একজন সফল শিক্ষার্থী যখন কলেজের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়ায়, সে অনুভব এক অজানা জগতের নতুন আলো। পাশাপাশি যারা পরীক্ষায় সফল হতে পারেনি তাদের বিষয়টিও বিশেষভাবে নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরী। অনেক অকৃতকার্য শিক্ষার্থী দুঃখে কষ্টে আত্মহননের পথও বেছে নেয়। এমন চিন্তা মনে আসাও অপরাধ। জীবন অনেক মূল্যবান তাৎক্ষণিক কোন ফল লাভের চাইতেও। যারা পাস করতে পারে না শিক্ষাবোর্ড তাদের জন্য সুযোগ দেয়। পরবর্তীতে তারা সফলকামও হয়। এমন নজিরেরও কোন অভাব নেই।
এবারের মাধ্যমিকের ফলে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ইংরেজী ও গণিতে ভাল করা। অঙ্ক ও ইংরেজীর প্রতি শিশু বয়স থেকে যে ভয়ভীতি থাকে সেটাকে একেবারে প্রথম থেকে অতিক্রম করতে না পারলে ছাত্রছাত্রীদের জীবন সুস্থিরভাবে এগুতে পারে না। এ ব্যাপারে শিক্ষক ও অভিভাবকদের নজরদারির প্রয়োজন আছে। বিষয়গত ভীতিগুলো কাটাতে শিক্ষা জীবনকে আরও যতœ আর পরিশীলিত অনুভবে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। সঙ্গে পারিবারিক সুষ্ঠু আবহও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ভিত্তি তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
দেশের ভাবী প্রজন্মকে গড়ে তুলে যোগ্য নাগরিক তৈরি হওয়া একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভাবনায় নিতে হবে। এজন্য শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা বিশেষ দায়িত্ব। দুর্নীতির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শিক্ষকদের মান যেন কোনভাবে ক্ষুণœ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। মানসম্মত শিক্ষক যখন কোন শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ার হাতিয়ার হন সেক্ষেত্রে এর চেয়ে মঙ্গল আর কিছু হয় না। পরীক্ষার ফল যেমন কোন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সফলতা, একই সঙ্গে তা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের মানসম্মত ব্যবস্থাপনার ওপরও অনেকাংশে নির্ভরশীল। যোগ্যতার মাপকাঠি শুধু পরীক্ষার ফলে নয়, মেধা ও মনন বিকাশে ছাত্র ছাত্রীদের যথার্থ মূল্যায়ন পদ্ধতি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় অত্যন্ত জরুরী, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে তার শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় এনেছেন। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের জন্য পরীক্ষা নামক ভীতিকর ব্যাপারটিকে মুছে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে তাদের মেধা ও মনন যাচাইয়ে বিশেষ নজর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সৌজন্যে: দৈনিক জনকণ্ঠ