পুরনো একটি কথা দিয়ে শুরু করি। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিদ্ধান্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। বিরোধ মিমাংসার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাউশি অধিদপ্তরের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা হয়। তখন আমি মাউশির প্রশিক্ষণ শাখা থেকে কলেজ-১ শাখায় বদলি হয়ে গিয়েছিলাম। ত্রিপক্ষীয় সভায় মাউশি অধিদপ্তরের পক্ষে প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক শ্রদ্ধেয় ডঃ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ অংশ নেন।
ওই সভার আগেই মিমাংসার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা কামনা করে আমি একটি চিঠি সম্পাদনা করেছিলাম, যেখানে আমার নিজের একটি মন্তব্য ছিল এমন: “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা করছে।” ডঃ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে করা আমার ওই মন্তব্যটি বাদ দিতে বললেন। আমি রাজি হইনি। আমি স্যারকে বলেছিলাম যে, আমার এই মন্তব্যের জন্য আমরা প্রয়োজনে ক্ষমা চাইব কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধে আমরা কী ভাবি তা সবার জানা দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভা শেষে সিরাজ স্যার মাউশিতে আমার রুমে এসে আনন্দের সঙ্গে বলেছিলেন, “যুদ্ধ জয়ের খবর মৌখিকভাবে দিতে হয়।”
আজ ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে একটুও বদলায়নি তার একটি উদাহরণ দিয়েই আমার এ লেখাটি শেষ করছি।
সেদিন কলেজের সেমিনার সহকারী আমাকে জানালেন যে, ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড করা হয়েছে। ১৬ জনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড করা যায় নি। কেন ডাউনলোড করা যায় নি জানতে চাওয়ার জবাবে পেলাম এরা প্রথমে অন্য ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছিল, তাদের প্রথম ভর্তি বাতিল করা হয় নি বলেই রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড করা যায়নি।
আমার প্রশ্নঃ এখন করণীয়? সেমিনার সহকারী জানালেন যে, তাদেরকে দশ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে রেজিস্ট্রেশন বাতিল না হওয়ার জন্য এবং রেজিস্টেশন-এর জন্য সাতশ টাকা দিতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত দিলাম, “সংশ্লিষ্টদেরকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বল।”
আলোচনাঃ পছন্দের বিভাগ না পেলে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। নতুন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর নতুন বিভাগে ভর্তি হলে কলেজ পর্যায়ে কেবলমাত্র এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে কাগজ-পত্রাদি স্থানান্তর হয়। প্রথম বিভাগের ভর্তি বাতিল হয় এবং নতুন বিভাগে ভর্তি কার্যকর হয়। অতীতেও তাই দেখে এসেছি। এবার অন্য রকম হলো কেন?
জরিমানা হয় অপরাধমূলক কাজের জন্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যদি অনুমোদন না করত তবে কোনভাবেই নতুন কোন বিভাগে ভর্তি হওয়া সম্ভব হত না। তা হলে অপরাধ কে করেছে? আমার মনে হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পিতভাবেই এই অপরাধ করেছে। কেন এরকম মনে হয়েছে তার পেছনে যুক্তি আছে। অতএব শাস্তি যদি আরোপ করতে হয় তবে তাদেরই উচিত নিজের ওপর শাস্তি প্রয়োগ করা। শাস্তি হতে হয় অপরাধের আনুপাতিক। নতুন বিভাগে ভর্তি হওয়া এবং পুরাতন বিভাগের ভর্তি বাতিল না হওয়ার জন্য দশ হাজার টাকার শাস্তির মাত্রা কোনভাবেই ভর্তির ফি বা বেতনের সমানুপাতিক বিবেচনা করা যায় না। অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি নির্ধারণ কোনভাবেই আনুপাতিক বলে মনে করতে পারি না। একটি উদাহরণ দিই। ১ম বর্ষে ভর্তির ফি ৫০০ টাকা আর ভর্তি বাতিলের ফি এক হাজার পাঁচশ টাকা। বন্ধুরা বলেন কোন যুক্তি আছে?
আমি আজও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকান্ডের জন্য একে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বলেই বিবেচনা করি।
পাদটীকা: বুদ্ধিমানরা যখন খারাপ হয় তখন তাদের অনেক কাজকর্ম চূড়ান্তভাবেই খারাপ হয়।
এনামুল হাই এফসিএ: অধ্যাপক।
আরও পড়ুন: অস্বাভাবিক জরিমানা বাতিল দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন