‘আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু হাত হারিয়ে সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। চালকদের দোষে আমি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেলাম। তাই সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে যেন নিয়োগ দেয়া হয়। তাহলে জীবনটা কোনোভাবে চালিয়ে নেয়া যাবে। তা না হলে হাতহীন এ জীবন হবে অভিশাপের।’ ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে রোববার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রাজশাহী কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফিরোজ সরদার (২৫)। গত ২৮ জুন ট্রাক ও বাসের সংঘর্ষে ডান হাত হারিয়েছেন তিনি। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নামোইট গ্রামের দরিদ্র কৃষক মাহফুজুর রহমানের ছেলে তিনি।
দুপুরে ফিরোজকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয় এরপর নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ বলেন, ‘জীবনের ২৫টি বছর অতিক্রম করেছি। বাবা কষ্ট করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করার, বাবা-মাসহ সবার মুখে হাসি ফোটানোর। কিন্তু আমার সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেল।’
ফিরোজ বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর অসংখ্য মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। তাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আমি ঋণী হয়ে গেছি। যারা রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কলেজ অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং সহপাঠীরা আমাকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। এ ঋণ আমি পার্থিব জীবনে শোধ করতে পারব না।’ তবে ফিরোজ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির প্রতি। তিনি বলেন, ‘এত বড় একটা দুর্ঘটনার পরও তারা আমার কোনো খোঁজ নেয়নি।’
শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে ২৮ জুন সকালে রাজশাহী থেকে বগুড়ায় গিয়েছিলেন। পরীক্ষা শেষে বিকালে বাসে রাজশাহী ফিরছিলেন। পথে কাটাখালী এলাকায় বেপরোয়া বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ফিরোজের ডান হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে কেটে পড়ে যায়। তাই চলমান মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয়নি তার। এখন শুধু অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখছেন তিনি। ফিরোজের এ দুর্ঘটনায় গত ২৯ জুলাই কাটাখালী থানায় মামলা করেন তার বাবা মাহফুজুর রহমান। এরই মধ্যে ‘মোহাম্মদ পরিবহন’ নামের বাসের চালক ফারুক হোসেন সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে বাস ও ট্রাক। তবে ট্রাকচালক ওয়াহিদুজ্জামান এখনও পলাতক।
ফিরোজের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, সামনে এগিয়ে যেতে ফিরোজকে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আহত হওয়ার কারণে ফিরোজ এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে পারেনি। সামনের পরীক্ষা দেবার জন্য তাকে আরও এক বছর রাজশাহীতে অবস্থান করতে হবে। এই এক বছর আমরা তাকে হোস্টেলে ফ্রি থাকার ব্যবস্থা করব। কলেজ কর্তৃপক্ষ তার খাবারের দায়িত্ব নেবে। তিনি আরও বলেন, ফিরোজ যদি রাজি থাকে তবে রাজশাহী কলেজে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হবে।