সম্প্রতি প্রাচোর অক্সফোর্ড বলে কথিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিনের বেলায় পাবলিক আর রাতের বেলায় প্রাইভেট। তার অর্থ এই যে তিনি সান্ধ্যকালীন কোর্সের কড়া সমালোচনা করেছিলেন- শিক্ষা নয় বাণিজ্য সান্ধ্য কোর্সের মূল উদ্দেশ্য; অথচ সান্ধ্য কোর্স চালুর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল যারা দিনের বেলায় নানা কারণে ক্লাস করতে পারবে না তারা যাতে এসব কোর্সে ভর্তি হয়ে পাড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে এটা একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে; যা পূর্বে কখনও কল্পনায় আসেনি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ঘোষণার পরপরি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক দাপ্তরিক নির্দেশে বলা হয় সান্ধ্যকালীন কোর্স পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে বিধায় তা বন্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর পরপরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কযেকটি এ ধরনের কোর্সে আর নতুন করে ছাত্র ভর্তি না করার ঘোষণা দেয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশক্রমে। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, সম্প্রতি দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তৃতায় মাননীয় আচার্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান দুর্নীতি, অব্যবস্থা, শিক্ষকদের কাজের অবহেলা, ব্যাগিংয়ের মতো নিষ্ঠুরতা বন্ধে ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদান তথা গবেষণাসহ মূল কাজের বাহিরে নানা অর্থকারী কাজে জড়িত থাকা শিক্ষকদের এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির এসব সমালোচনা জনগণকে কিছুটা হলেও আশাবাদী ও আশ্বস্ত করেছে সত্যি কিন্তু উচ্চশিক্ষার মান, উপাচার্যদের কার্যকলাপ ও সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে যে আলোচনার ঝড় উঠেছে তাতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে জাতি চিন্তিত; যার একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার প্রয়োজন।
প্রথমে আসা যাক উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথ্যমতে, দেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে প্রায় একশ’ আটচল্লিশটি এবং সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিটি জেলায় একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে; যার সর্বশেষ সংযোজন চাঁদপুর, বগুড়া ও হবিগঞ্জ জেলা। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও সারাদেশের উচ্চশিক্ষার পাদপাঠ এই সকল বিশ্ববিদ্যালযগুলোর উপাচার্যসহ ছাত্ররাজনীতির নামে যে নৈরাজ্য চলছে তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দেশের জাগ্রত সমাজ। শুধু তাই নয় এই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান বিশ্ব র্যাংকিং কিংবা আঞ্চলিক র্যাংকিংয়ে কোন স্থান করতে না পাওয়া ইত্যাদি দেশের সুশীল সমাজকে হতাশাগ্রস্ত করছে। সাম্প্রতিক কালে দেশের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় সান্ধ্যকালীন কোর্স কিংবা উইকেন্ড কোর্স নিয়ে পর্যায়ক্রমে চারটি প্রতিবেদন প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেই সকল প্রতিবেদনে সান্ধ্যকালীন কোর্সের সাথে যে বাণিজ্যে জড়িয়ে আছে তার একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, যা খুবই ভয়াবহ।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উইকেন্ড কোর্স নামে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে ক্লাস পরিচালনা করা হয়; যা থেকে বছরে উপার্জন হয় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা; যা ৫০:৫০ ভাগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বনাম প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে। ছুটির দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫০০ ছাত্রছাত্রী জড়ো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং দু’দিনে ক্লাস ৯টা থেকে সান্ধ্য এমনকি রাত পর্যন্ত ক্লাস/পরীক্ষা চলে। ২০১১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে উইকেন্ড কোস চালু হলেও এখন তা চলছে ১৮টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে। সাধারণত এক বছরে তিনটি সেমিস্টারে সাপ্তাহিক এসব কোর্সের স্নাকোত্তোর ডিগ্রি দেয় বিভাগগুলো। আবার আইবিএ ও ইংরেজি বিভাগ দু- বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয় মূলত বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি, জাতীয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান করা শিক্ষার্থীদের। এবার আসা যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে যেখানে ৮৪টি বিভাগ ও ১২টি ইন্সটিটিউট রয়েছে; যার মধ্যে মোট ৪১টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউট সান্ধ্য কোর্সসহ অন্তত ৮০টি কোর্স পরিচালনা করে থাকে এর মধ্যে কেবল সান্ধ্যকালীন কোর্স রয়েছে ২৫টি বিভাগ ও ১০টি ইন্সটিটিউট যেখানে কেবল ছুটির দিনে শুক্র ও শনিবার বিকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত ক্লাস চলে।
প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি হন তিন হাজার পাঁচশ’জন এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি কোর্স ফি ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়; যার মাধ্যমে বছরে আয় হয় ৭০-৮০ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী এই টাকার ৬০ শতাংশ শিক্ষকরা পাচ্ছেন আর বিশ্ববিদ্যালয় যোগ হওয়ায়র কথা ৩০ শতাংশ, বাকি পরিচালনা ব্যয় ১০ শতাংশ। সান্ধ্যকোর্স ক্লাস নেয়া শিক্ষকেরা প্রতি সেমিস্টারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পান যার ফলে চাকরির বেতানের আওতায় নিয়মিত কোর্সগুলোর আকর্ষণ কমে যাচ্ছে যার ফলে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষর্র্থীরা শিক্ষা ও গবেষণা থেকে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর জন্য চাকরিজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স শুরু হয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের চারটি বিভাগের কোর্স নিয়ে যা বর্তমানে সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমরমা ব্যবসায় পরিণত হয়ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয় এবং এখানে জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হবে।
এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্যকোর্সের নামে যা কিছু চলছে তার দায়ভার উপাচার্যদের, যিনি হলেন একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান অর্থাৎ সিন্ডিকেট, সিনেট, একাডেমিক কমিটি ইত্যাদির সভাপতি। তাছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান; যার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ একেবারেই সীমিত কেবলমাত্র বাজেট বরাদ্দ ও তার হিসাবনিকাশ ছাড়া। সেই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের পথ আছে স্বল্প পরিসরে হলেও যা সার্বিক সরকারের বাজেট বরাদ্দের শতকরা হারে ন্যূনতম অংশ মাত্র। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সংশোধন এনে স্বায়ত্তশাসনের অধিক সুযোগ করে দিয়েছিলেন এই সকল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানকে যাকে বলা হয়ে থাকে (The State Within The State) কিন্তু দীর্ঘ সময়ের পথ পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তার এই মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে; যা জাতীর জন্য খুবই দুঃখজনক।
সাম্প্রতিক কালে বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্যদের কার্যকলাপ নিয়ে গণমাধ্যমে যে সকল অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বেড়িয়েছে যার মধ্যে রয়েছে যেমন নিয়োগ বাণিজ্য, নির্মাণ কাজে বাণিজ্য ক্রয়ে বাণিজ্য, ছাত্র ভর্তি বাণিজ্য, সান্ধ্যকোর্স বাণিজ্য, যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বাণিজ্য, রাজনীতির নামে বাণিজ্য ইত্যাদি; যা এই পদটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে যার ধারাটির শুরু হয়েছিল নব্বই পরবর্তী রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোর ক্ষমতায় আসার পরপরই যে ধারা এখনও অব্যাহত আছে। তার সাথে যোগ হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর ছাত্র সংগঠনের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি তথা উপাচার্যকে তার ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার বাহিনী (Watch Dod) হিসাবে (Give and Take) এর মাধ্যমে সরকারি দল থেকে অথবা সরকারি দলের সর্মথক শিক্ষক সংগঠনের নেতা হয়ে উপাচার্য পদে আসিন শিক্ষকদের ক্ষমতার বলয়ে সারা প্রতিষ্ঠান কম্পিত।
যার ফলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক বা পরামর্শক (UGC) কারও তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে; যা এখন জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র না হয়ে রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্র পরিণত হয়েছে। তাহলে এই প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশুনা কিংবা গবেষণার পবিবেশ আছে কি? প্রথাগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তিনটি কাজ যথা : শিক্ষকতা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ যার মধ্যে শিক্ষা প্রদান হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্য বিষয় সেটি যে মানের হোক না কেন। আর গবেষণার মধ্যে রয়েছে ¯স্নাতাকোত্তর পরবর্তী গবেষণা ছাত্র বিশেষত এমফিল, এমএস ও পিএইডি পর্যায়ে যার জন্য সাধারণত অবকাঠামোগত সুযোগ যেমন বিশাল গ্রন্থগার, হোস্টেল, সেমিনার কক্ষ, বিভাগীয় লাইব্রেরি ও অভিজ্ঞা শিক্ষক (Supervisor)।
তারপরও দেখা যাচ্ছে এই সকল গবেষণা কার্যক্রমে ছাত্রদের তেমন কোন আকর্ষণ পরিলক্ষিত হয়না যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্ষুদ্রকার হলেও গবেষণা বৃত্তির ব্যবস্থা করে থাকে তাদের সামর্থ্যরে ভিত্তিতে। তারপরও যারা ভর্তি হয় তারা সুপারভাইজারদের তেমন কোন পরামর্শ পায় না কার্যকরভাবে। এর একটি বড় কারণ সেই শিক্ষক তত্ত্বাবধায়করা বিভিন্ন আয়বর্ধনমূলক কাজে যেমন কোচিং, সান্ধ্যকোর্স, কলসালট্যান্সি, বিদেশে ভ্রমণ ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়েন যার ফলে সময়মতো মানসম্মত গবেষণা হয় না তথা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের কার্যক্রম শেষ করতে অক্ষম হয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষকের পিএইচডি থিসিসে ৯৮ ভাগ প্রেগারিজমের অস্তিস্ত পাওয়া গেছে যার ফলশ্রুতিতে কর্র্তৃপক্ষ সেই শিক্ষককে বিভাগীয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অপসারণ করছে।
বিষয়টি এখানেই শেষ নয় তথা মাননীয় হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিদের্শ দিয়েছেন যে সকল থিসিস চলমান আছে বা নতুন প্রস্তাবনা জমা পড়বে সেগুলো অনুমোদনের জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রেরণসহ সাম্প্রতিককালে যত এমফিল/পিএইচডি থিসিস সম্পন্নপূর্বক ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে সেই সকল পত্রের কপি জমা দেয়ার জন্য। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রম এখন এমন একটি ইমেজ সংকটে পড়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে বলে মনে হয় না । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপদেষ্টা কিংবা খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন; যা আদো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ (উপাচার্যের সচিবালয় কিংবা রেজিস্ট্রার অফিস কিংবা ডিন অফিস) অবগত আছে কিনা জানা নেই? রংপুরভিত্তিক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে- অধিকার সুরক্ষা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। যেমন- কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, একই সাথে দুটি অনুষদের ডিন, একটি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক, একটি বিভাগীয প্রধানের দায়িত্ব ইত্যাদি (উৎস প্রথম আলো, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। কিন্তু এই উপাচার্য বহাল-তবিয়তে আছেন খুঁটির জোরে। অভিযোগগুলোর ন্যূনতম তদন্ত পর্যন্ত করেনি ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মহামান্য আচার্য সঠিক জায়গাটিতে প্রশ্ন রেখেছেন। এই ধরনের পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি বা এর সমাধান একদিনে সম্ভব হবে না। এখন মাননীয় আচার্য মহোদয় যে সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মতামত রাখেন তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয় মেমন সমন্বিত ভর্তি নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কথা তুলেছিলেন আজ থেকে দু-বছর আগে যার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। দেশের প্রায় ১৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয় তদারক কাজে নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কতটুকু শক্তিশালী? উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করার কথা দীর্ঘদিন যাবত চলছে তার অগ্রগতি কতটুকু? অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হলেও তার কার্যকারিতা কি? দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধক্ষ্যবিহীন চলছে কেন এবং সেই সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রদত্ত সাটির্ফিকেট বৈধ কি? কোষাধক্ষ্য বিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ কিনা যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এ বলা হয়েছে সেই সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে আয় হবে তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে ব্যয় করার কথা থাকলেও তা স্বচ্ছতার সাথে হচ্ছে কি? এই সকল প্রশ্নের রেড়াজালে জড়িয়ে গেছে দেশের উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের ভবিষ্যৎ। আচার্য হিসাবে এই সকল বিষয়গুলোর দেখভালের দায়িত্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতির ওপর পড়ে। তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বা সরকারেরই বা দায়িত্ব কি?
কিছু দিন আগে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী হঠাৎ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন এমন একটি সময়ে যখন বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিতে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। এমন এক মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক গঠিত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে দেখে থাকেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবস্থিত আচার্য সচিবালয়ে (যার সদস্য সচিব শিক্ষা সচিব নিজেই) তা দাখিল করা হয়। এই সকল তদন্তের সুপারিশ মতে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনসাপেক্ষে আচার্য সচিবালয় উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন; যা গোপালগঞ্জ শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে হয়েছে সত্যি কিন্তু যে প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিক অপসারিত উপচার্যের কি শাস্তি হলো তা আর জানা যায়নি। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে তা হয়। এই বিষয়গুলোর সমাধান কিভাবে হবে তা ভাবার সময় এসেছে এবং এটা যদি অভ্যাসে পরিণত হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প আপাতত নয়। তাই আচার্যের সচিবালয়কে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাথে সহযোগী হিসেবে থাকবে নীতিনির্ধারণী সংস্থা। তাহলেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির আকাক্সক্ষা পূরণের পথ অনেকটা সুগম হবে।
লেখক : ড. মিহির কুমার রায়, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক