জাতীয় মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউটের (বিএসইটিআই) অভিযান অব্যাহত থাকলেও নিষিদ্ধ খাদ্যপণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার আগ্রহ নেই প্রাণের। বুধবার (১৯ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিষিদ্ধ পণ্য হওয়ার পরও প্রাণের ‘প্রিমিয়াম ঘি’ পাওয়া গেছে দোকানে দোকানে। এ ব্যাপারে বিএসটিআইর নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না প্রাণ। এমনকি পণ্য বিক্রি না করার জন্য ডিলারদের কোনো চিঠিও দেয়নি প্রাণ।
ভেজাল রোধে গত রমজানে বাজার থেকে পণ্য নিয়ে পরীক্ষা করে বিএসটিআই। দুই দফায় এতে প্রাণের ৪টি পণ্যেই ভেজাল পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে- প্রাণের গুঁড়া হলুদ, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই ও প্রিমিয়াম ঘি।
বিএসটিআই থেকে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় মে মাসের শুরুতে প্রাণের তিনটি পণ্যে ভেজাল পাওয়া যায়। এগুলো হল- গুঁড়া হলুদ, কারি পাউডার ও লাচ্ছা সেমাই। পরে এসব পণ্যের লাইসেন্স স্থগিত করে পণ্যগুলো নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় সপ্তাহখানেক আগে ভেজাল ধরা পড়ায় প্রাণের ‘প্রিমিয়াম ঘি’সহ কয়েকটি কোম্পানির পণ্যের লাইসেন্স স্থগিত করে বিএসটিআই। একই সঙ্গে এসব পণ্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় কোম্পানিগুলোকে। সে হিসাবে শুক্রবারের মধ্যে ওই পণ্য তুলে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেয়নি প্রাণ। বাজারে এখনও প্রাণের ‘প্রিমিয়াম ঘি’ বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের কাছে এখনও ওইভাবে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এ কারণে তারা বিক্রি করছেন। রাজধানীর কেরানীগঞ্জের সর্ববৃহৎ পাইকারি ও খুচরা বাজার জিনজিরা বাজারে প্রাণের এই পণ্য এখনও দেদারসে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, খাদ্যপণ্য নিয়ে আমরা ভোক্তারা অনেক শঙ্কিত। আগে জানতাম ছোট কোম্পানিগুলো খাদ্যে ভেজাল দেয়। এখন দেখছি প্রাণের মতো আস্থা তৈরি করা কোম্পানির পণ্যেও ভেজাল।
রাজধানীর নয়াবাজারের ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান জানান, কোম্পানি থেকে এখনও পাইকারি ও খুচরা পর্যায় এই ঘি বিক্রি না করা বা বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়ার কোনো চিঠি পাইনি। কোম্পানির কোনো প্রতিনিধিও এই পণ্য বাজার থেকে সরানোর জন্য আসেনি। তাই এখনও দোকান থেকে প্রাণের ‘প্রিমিয়াম ঘি’ সরানো হয়নি।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা প্রাণের ‘প্রিমিয়াম ঘি’সহ লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিলকৃত পণ্য বাজার থেকে উচ্ছেদের জন্য বাজার মনিটরিং করছি। রাজধানীর সবক’টি বাজারে অভিযান চালাব। এসব পণ্য পেলে ভোক্তা আইনের আওতায় শাস্তি দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে প্রাণের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বিএসটিআইর পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এসএম ইসহাক আলী বলেন, এই পণ্যগুলো বাজারে এখনও আছে, এটি মোটামুটি সবারই জানা। তবে একটি বিষয় আমি জোর দিয়ে বলব, আমরা বসে নেই। বিএসটিআইর অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফার পণ্যগুলোর জন্য দেয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পর গত শনিবার থেকে এই অভিযান শুরু হয়। আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ কোনো পণ্য পাওয়া গেলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।