দেশের ৭৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক আছেন। একজন শিক্ষকই স্কুলের ঘণ্টা বাজানো থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যন্ত সব কাজ সম্পন্ন করছেন। ‘বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন : অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে যে, ১ হাজার ১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে শিক্ষক আছেন মাত্র দু’জন। তিনজন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। রোববার (১৫ মার্চ) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, এক-দু’জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় চালানো যে অসম্ভব সেটা বলাবাহুল্য। উল্লিখিত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যে মানসম্মত লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য কোন গবেষণা করার প্রয়োজন নেই। শিক্ষকের অভাবে অনেক স্কুলে দফতরি বা শিক্ষার্থীরাই ক্লাস নিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে শিক্ষকের সংকট দেখা দিয়েছে নাকি নিয়ম মেনে পদায়ন করা হচ্ছে না। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, হাওর বা চরের মতো দুর্গম স্থানে অবস্থিত বিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষক সংকট দেখা যায়। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেকেই দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে অনীহা দেখান। অনেক শিক্ষক দেন-দরবার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের পছন্দের স্কুলে পদায়ন নিশ্চিত করেন। পদায়নের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা খেয়ালও করেন না যে কোন বিদ্যালয়ে কতজন শিক্ষক লাগবে। নিয়ম হচ্ছে, শিক্ষক সংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এ নিয়ম মানা হয় না।
নিয়ম করে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করা হলে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি নজরে আসত। সমস্যা হচ্ছে, বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা হয় না। যাদের ওপর পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা লোকবল সংকটের কথা বলে দায়িত্ব এড়াতে চান। আমরা জানতে চাইব, যে লোকবল আছে তা দিয়ে কী কাজ করা হয়েছে। ক’টি বিদ্যালয়ের সমস্যা-সংকট চিহ্নিত করে সমাধান করা হয়েছে সেটা জানা দরকার।
আমরা বলতে চাই, দেশের সব বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট অবিলম্বে দূর করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত শক্ত করতে হলে এটা করা জরুরি। শিক্ষক সংকটে ভোগা বিদ্যালয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষক পদায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন তদবির বা রাজনৈতিক দেন-দরবারকে স্থান দেয়া চলবে না। পাশাপাশি দুর্গম এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি।