প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের শিক্ষা উপকরণ দিয়ে পাঠদান করলে শিশুরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। জানামতে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রাক প্রাথমিক (শিশুদের) একটি কক্ষই রয়েছে। যা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাধ্যতামূলক করেছে। এ বয়সের শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে মনোনিবেশ খুবই কম থাকে। তাই খেলতে খেলতে শিক্ষা, শিশুদের আকর্ষণের জন্য খেলার ছলে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহজে পাঠদান যেমন হাতের তৈরি আম, কাঁঠাল, বল, কলা, শাপলা ফুল প্রভৃতি উপকরণ ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান। একজন সফল শিক্ষক হতে হলে শিক্ষকের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী সংগ্রহ, তৈরি, ব্যবহারে নৈপুণ্য লাভ করা দরকার।
২য় থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণের সবচেয়ে পরিচিত ও উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক, সহায়ক পুস্তক ইত্যাদি। এছাড়াও শিক্ষা উপকরণের মধ্যে রয়েছে শ্রেণিকক্ষে সাধারণভাবে ব্যবহূত দ্রব্যাদি যেমন ব্লাকবোর্ড, চক, মার্কার কলম, ফ্লানেল বোর্ড ইত্যাদি। এই শ্রেণির উপকরণকে আমরা সাধারণ ‘শিক্ষা সহায়ক উপকরণ’ নামে অভিহিত করে থাকি। যে সমস্ত উপকরণের সাহায্যে পাঠ্য বিষয়কে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজবোধ্য করে তোলা যায়, তাকে পাঠ সহায়ক উপকরণ বলে। অর্থাত্ শিখন-শেখানোর কাজ আনন্দদায়ক, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করার জন্য স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, শস্যদানা, প্রাণীজগত্, ছাকন প্রক্রিয়া, গ্রিন হাউস, বিজ্ঞান কর্নার, আগ্নেয়গিরি, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্র, নৌকা, ঢেকি, মুক্তিযুদ্ধের পর ধারাবাহিক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ইত্যাদি তৈরি করা যেতে পারে বাঁশ, মাটি, কাঠ, খড়, মাটির হাঁড়ি, পেপার কাটিংসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে।
শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম আকর্ষণীয়, গ্রহণযোগ্য ফলপ্রসূ ও স্থায়ী করতে হলে প্রয়োজনীয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের সামনে কঠিন বিষয়গুলো উপকরণের সহায়তায় উপস্থাপন করতে পারলে তারা অতি সহজেই অনুধাবন করতে পারে এবং দীর্ঘকাল তা শিক্ষার্থীর মনে টিকে থাকে। এসব উপকরণ ক্রয়ের জন্য প্রচুর অর্থের দরকার হয়। এজন্য ব্যয়বহুল কোনো উপকরণ ব্যবহারের কথা চিন্তা না করাই ভালো। তবে বেশিরভাগ বিষয়ের জন্য পাঠ সহায়ক উপকরণ তৈরি করা একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের পক্ষে মোটেই কঠিন কাজ নয়, কিছু সময় ও পরিশ্রমের প্রয়োজন মাত্র। এছাড়া যে কোনো বিষয়ের জন্য একবার উপকরণ সংগ্রহ, তৈরি ও সংরক্ষণ করতে পারলে তা বহুদিন বিভিন্ন পাঠে ব্যবহার করা সম্ভব। এজন্য পরিবেশ থেকে পাঠ সহায়ক শিক্ষোপকরণের প্রয়োজনে কিছু বাস্তব জিনিসপত্র সংগ্রহ করা যেতে পারে। যেমন উল্লিখিত মডেল বা চার্ট তৈরি।
শিক্ষা উপকরণগুলো তৈরি বা সংগ্রহ করে যদি একটি কক্ষে বিষয়ভিত্তিক সাজিয়ে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তা শিক্ষকের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হবে। তবে শিক্ষা উপকরণগুলো সাজিয়ে রাখার উদ্দেশ্য তৈরি করলে হবে না, এর যথেচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো নষ্ট হতে পারে, হারিয়ে যেতে পারে। এজন্য শিক্ষককে সাধারণ মেরামতের কাজটুকু নিজেকেই জানতে হবে, করতে হবে। শিক্ষা উপকরণ যথার্থভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বছরের পর বছর তা ব্যবহার করা সম্ভব। উপকরণ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে শিক্ষক/ শিক্ষিকা নিজের গরজে সেগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। উপকরণের ব্যবহার, শিখন ও সংরক্ষণে প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনে নতুন মেরুকরণ হতে পারে।
নীলফামারী
সৌজন্যে: ইত্তেফাক