প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে কমিশন গঠনের উদ্যোগ - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে কমিশন গঠনের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা আনতে আলাদা একটি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিশনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মতো স্বাধীন একটি সংস্থা হবে। সেখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। এটি হলে শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসি প্রধান অন্তরায় বলে জানা গেছে।  

জানা গেছে, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরির্দশনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিদর্শনকালে শিক্ষক নিয়োগে আলাদা একটি কমিশন গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগের কাজটি দৈনন্দিক বিধায় এটি জটিল বিষয়। আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) হয়ে আসতে আসতে অনেক সময় লাগে। এ জন্য আমার একটা প্রস্তাব আছে। এ বিষয়ে কাজও হচ্ছে। আমি মনে করি, শিক্ষক নিয়োগে একটা আলাদা কমিশন হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, কমিশন ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ বিদ্যমান সমস্যা সমাধান সম্ভব না। তাই কমিশনের বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। যে কোনো জটিলতা এড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পরও থেমে ছিল কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা আসার পর কমিশন গঠনের কাজে হাত দেন সচিব আকরাম-আল-হোসেন। 

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আমি সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেই। সেজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দেই। কিন্তু সেখানে থেকে না সূচক জবাব এসেছে। কমিশন গঠনের কোনো সুযোগ নেই বলে তারা মত দিয়েছে। যেহেতু প্রধামন্ত্রীর নির্দেশনা দিয়েছেন তাই এটার পিছনে লেগে আছি। প্রধানমন্ত্রী আবার আমাদের মন্ত্রণালয়ের সফরে আসবেন। তখন বিষয়টি আবার উঠানো হবে বলে তিনি জানান।  

তিনি বিশ্বমানের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে নিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান করেছেন। যেখানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ক সভায় কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) পলিসি ও অপারেশন বিভাগকে নির্দেশ দেন। সেই প্রতিবেদন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে কমিশন গঠনের মতামত চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নেতিবাচক মত দিয়েছে বলে জানা গেছে। তারপরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিশন গঠনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।    

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি চাকরিতে সবেচেয়ে বেশি নিয়োগ হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে। গত পাঁচ বছরে এক লাখ ২৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আরও ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ১২ হাজার পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ২৪ লাখের বেশি। প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ২০০ বেশি চাকরি প্রার্থী। এ শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পরেছে অধিদপ্তর। পাঁচ দফা পরীক্ষার সময় পিছানোর পর আগামী ২৪ মে থেকে চার ধাপে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। 

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, চাকরিপ্রার্থী ও পরিদর্শককের সিট বন্টন, খাতা মূল্যায়ণসহ সব কিছুই বুয়েট করে। আর প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ায় পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষা উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘ সময় লাগছে। তবে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব বুয়েটকে দেওয়ার পর শিক্ষক নিয়োগে তেমন কোনো বির্তক নেই। 

বুয়েটের তত্ত্বাবধানে হওয়া প্রায় সবকটি নিয়োগ প্রায় স্বচ্ছভাবে হয়েছে। ডিপিই কর্মকর্তারা জানান, এক সময় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস, পরীক্ষার হলে উত্তর লিখে দেওয়া থেকে চাকরি নিশ্চিত করার কন্ট্রাক নিতো দালাল চক্র। বুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সে ঘটনা আর ঘটছে না। তবে বুয়েটের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা কমিশন গঠনের পক্ষে।  

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এটি নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কোনো বির্তক উঠেনি। তারপর আমরা চাই আরও স্বচ্ছ হউক। এজন্য কমিশন গঠন করলে স্থায়ী একটি সমাধান হয়ে যায়।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010164976119995