সরকার অনেক আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়েছে, কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতা নিচের স্তরেই রয়ে গেছে। আগে তাঁদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং এখন পর্যন্ত আগের গ্রেডেই তাঁরা বেতন পেয়ে আসছেন। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়লেও বেতন-ভাতা বাড়েনি। একইভাবে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকেরা বর্তমানে বেতন পান ১৪তম ও ১৫তম গ্রেডে, যা মুদ্রাক্ষরিকদের সমান। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সোমবার (২৮ অক্টোবর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যখন আন্দোলন করেছিলেন, তখন সরকার নীতিগতভাবে তাঁদের দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছিল। বলা হয়েছিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু গত দুই বছরেও নতুন গ্রেড বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। নতুন কাঠামোয় প্রধান শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পাবেন। এ ছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষকের একটি পদ চালু করারও ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৯০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার সহকারী শিক্ষক ও ৪২ হাজার প্রধান শিক্ষক আছেন। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষককে বঞ্চিত রেখে প্রাথমিক শিক্ষাকে যে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়, তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অজানা নয়। দুই বছর আগে নীতিগতভাবে শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার পর সেটি বাস্তবায়ন না হওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অমার্জনীয় উদাসীনতা বলে মনে করি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব বলেছেন, গ্রেড পরিবর্তনে যে বাড়তি খরচ হবে, তা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ও রাজি আছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ পুলিশ ভন্ডুল করে দিয়েছে অনুমতি না থাকার অজুহাতে। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহতও হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন। শিক্ষকদের প্রতি এই নির্মম আচরণ কেন? সরকার আগেভাগে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিলে শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে রাজপথে নেমে আসতে হতো না।
প্রাথমিক শিক্ষকেরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও পাঠদান থেকে বিরত থাকেননি। শহীদ মিনারের সমাবেশে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে তাঁরা কালো কাপড় পরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। প্রাথমিক শিক্ষকেরা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। ওই তারিখের মধ্যে দাবি মানা না হলে তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ১৭ নভেম্বর থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। আমরা আশা করব, সরকার তার আগেই প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি মেনে নেবে এবং এ বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকেই।