সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের বিষয়ে অর্থসচিরে সাথে মৌখিক আলোচনা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। দ্রুত এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন।
তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ ও সহকারীদের ১২তম গ্রেড দেয়ার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফিরিয়ে দেয়ার পর এ বিষয়ে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয় সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তার সঙ্গে বৈঠক করে নতুন করে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম, সহকারি প্রধান শিক্ষকের বেতন ১১তম এবং সহকারি শিক্ষকদের বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা দশম গ্রেডে বেতন পান। আবার তারা প্রধান শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা। এজন্য দু’জনের একই গ্রেড হতে পারে না। তাই একধাপ নিচে প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতন পাবেন। সহকারি প্রধান শিক্ষক নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন কোনো পদই নেই। নতুন বেতন কাঠামোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সহকারি শিক্ষকদের মধ্য থেকে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। সহকারি প্রধান শিক্ষকরা বেতন পাবেন দ্বাদশ গ্রেডে। আর সহকারি শিক্ষকরা বেতন পাবেন ১৩তম গ্রেডে। নতুন বেতন কাঠামোয় প্রশিক্ষণ আর প্রশিক্ষণ বিহীন বলে কোনো শব্দ থাকবে না।
জানা যায়, বর্তমানে প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ১৩তম গ্রেড পান। প্রধান শিক্ষকরাও প্রশিক্ষণ ছাড়া ১২তম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ১১তম গ্রেড দেয়া হচ্ছে।
সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য দূরীকরণ কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে বেতন বাড়ানোর নামে কেউ আন্দোলনে যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে, বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর (জাকির হোসেন) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
এই ইস্যুতে যেই আন্দোলনে নামবে তাদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) বলা হয়েছে। শিক্ষকদের সতর্ক করতে ডিপিই থেকে সতর্ককবার্তা জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।
গ্রেড পরিবর্তন ও বেতনবৈষম্য দূরীকরণে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষকদের ১০তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবিতে আগামী ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সেখান থেকে সমাপনী পরীক্ষা বর্জন ও লাগাতার কর্মবিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠন মিলে সম্প্রতি গঠিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’। এ পরিষদের মাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ১৪ অক্টোবর সারাদেশের প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন, পরদিন দুই ঘণ্টা ও ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।
পরিষদের নেতারা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রধান শিক্ষকদের ১০তম ও সহকারীদের ১১তম গ্রেড দেয়ার দাবি জানিয়েছি। এ দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এর বাইরে কোনো কিছুই মেনে নেয়া হবে না। গ্রেড পরিবর্তনের নতুনভাবে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আমরা তা মেনে নেব না।
তারা বলেন, আমরা কয়েক দফায় আন্দোলনে নামলেও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার শুধু আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এ কারণে আগামী ২৩ অক্টোবর ঢাকায় কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।