প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলারে দুই ধরনের বেতন স্কেল উল্লেখ করা হয়। একটি হচ্ছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেল, অন্যটি প্রশিক্ষণবিহীন স্কেল। প্রাথমিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেডে (সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেসিক) ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক ১২তম গ্রেডে (১১ হাজার ৩ শ’ টাকা বেসিক) বেতন-ভাতা পান। অন্যদিকে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে (১০ হাজার ২ শ’ টাকা বেসিক) ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষক ১৫তম গ্রেডে (৯ হাজার ৭ শ’ টাকা বেসিক) বেতন-ভাতা পান।
প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পূর্বেই যেসব শিক্ষক বিএড কোর্স করেছেন শুধু তারাই সরাসরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেলে বেতন পান। অন্য শিক্ষকরা প্রশিক্ষণবিহীন স্কেলে বেতন পান। এতে একই দিনে একই পদে নিয়োগলাভ করেও কর্মজীবনের শুরুতেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (বিএডধারী) শিক্ষকদের সাথে প্রশিক্ষণবিহীন (পূর্বে বিএড করেনি) শিক্ষকদের বেতনের যে একটা বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে যা চাকরিকালীন আর কোনোদিন নিরসন হয় না।
প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগপত্রে স্পষ্ট করে লেখা থাকে যে চাকরিতে যোগদানের তিন বছরের মধ্যে ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে সম্পন্ন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকরাও পিটিআইগুলোর চাহিদা অনুসারে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন।
প্রত্যেক শিক্ষককে যেহেতু নির্দিষ্ট একটা সময়ে মধ্যে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলকভাবে নিতেই হয় তাহলে শিক্ষকদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য সৃষ্টিকারী এই প্রশিক্ষণবিহীন স্কেলের প্রয়োজনটাই বা কী? তাছাড়া প্রশিক্ষণবিহীন প্রাথমিক শিক্ষকরা পিটিআইগুলোতে দীর্ঘ দেড় বছর কঠোর পরিশ্রম করে যখন ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন কোর্স সম্পন্ন করে প্রশিক্ষণবিহীন স্কেল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেলের জন্য ফিক্সেসন করতে যান, তখন বেতন বাড়াতো দূরের কথা বরং নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণ করার কারণে শিক্ষকদের মূল বেতন আরও কমে যায় যা সেই শিক্ষকদের জন্য নির্মম কৌতুক।
এত কষ্ট ও পরিশ্রম করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেতন বৃদ্ধি না পেয়ে বেতন আরও কমে যায়। এরকম দুঃখজনক বিষয় একমাত্র প্রাথমিক শিক্ষক ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো পেশাজীবীর সাথে হয় না। সরকারি হাইস্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন কোনো স্কেল নেই। সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকরা নিয়োগলাভের দিন থেকেই সরাসরি ১০ম গ্রেডে বেতন পান এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উনাদের বিএড কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। তাই সরকারি হাইস্কুলে একই দিনে একই পদে যোগদানকারী শিক্ষকদের মধ্যে কোনো বেতন বৈষম্য সৃষ্টি হয় না। সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের কোনো প্রশিক্ষণবিহীন স্কেল না থাকলে প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টিকারী এই প্রশিক্ষণবিহীন স্কেল কেন থাকবে সেটাই কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রইল।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষকরাও যেহেতু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তাহলে প্রাথমিক শিক্ষকরা কি সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায় সরাসরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেল পেতে পারে না? তাই কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ প্রশিক্ষণবিহীন স্কেল বাতিল করে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের সরাসরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেল প্রদান করা হোক।
লেখক: সহকারী শিক্ষক
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]