দেশে হাজার কোটি টাকা পাচার হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুদক কেন? সংবাদটি আমার অনেক বন্ধু বেশ জোর দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করি। আমার জানা মতে, দেশে প্রায় ৬৪ হাজারের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, যার প্রায় সবগুলোতে আছে ভালো স্কুল ভবন, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, খেলার মাঠ, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষকমণ্ডলী।
পক্ষান্তরে বিভিন্ন তথ্য মতে, দেশে প্রায় ৭০ হাজার কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে। যার মধ্যে সরকারি স্কুলের ওইসব সুযোগ সুবিধার কোনোটিই নেই। যদিও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বিতর্কিত কারিকুলাম, তথাকথিত শিক্ষাবিদের রচিত পাঠ্যপুস্তক ও চাপ প্রয়োগ করে পড়ানোর।
তারপরও কী কারণে শিক্ষার্থীরা সেদিকে ছুটছে তা ভাবনার বিষয়। এভাবে চলতে থাকলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো একদিন শিক্ষার্থী শূন্য হবে। এ কথা বলা বাহুল্য যে, শিক্ষার্থীদের মাঝে খাদ্য ও উপবৃত্তি প্রদান করা না হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবনার বিষয়। হয়ত এ নিয়ে সরকার ভাবতে শুরু করছে।
তাই প্রশ্ন ওঠে, শিক্ষার শুধু প্রাথমিক স্তরেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে এতগুলো কিন্ডার গার্টেনের মতো বিকল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হলো কেন? এর উত্তরে বেরিয়ে এলো নানান সমস্যা (শিক্ষক স্বল্পতা, বেতন বৈষম্য, পাঠদানের বাইরে কাজ) ও কতিপয় শিক্ষকের কর্তব্যের অবহেলার কথা।
প্রাথমিক শিক্ষার এই যখন অবস্থা তখন নগণ্য হলেও সত্য যে এখনও কোনো কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের আর্থিক দুর্নীতি হয়ত একদিন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কিন্তু শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হলে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কারণ প্রজন্ম কখনও থেমে থাকে না। তাই আগে চাই শিক্ষা।
জনগণ সুশিক্ষিত হলে দেশে দুর্নীতি কমবে। তাই হয়ত সরকার গাছের গোড়ায় আগে জল দেওয়া শুরু হয়ছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সরকারের যে ভাবনা তা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক সবার জন্য সুখকর। এ মতামত আমার একান্ত নিজস্ব।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট।