প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি ছাত্র ফ্রন্টের - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি ছাত্র ফ্রন্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার)। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছাত্র সমাবেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এ দাবি আদায়ে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখছেন সংগঠনের সভাপতি মাসুদ রানা

সংগঠনের সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক, ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দীকী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভে সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার একই পদ্ধতির গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতির দাবিতে ছাত্র ফ্রন্টের জন্ম। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সংগঠনটি শাসকশ্রেণির শিক্ষা সংকোচন ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিপরীতে শিক্ষার অধিকার রক্ষা ও আদায়ে লড়াই করছে। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে আজও সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত আয়োজন সরকারের নেই। তার উপর, বছরের পর বছর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে সরকার। যার গিনিপিগ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।’

বক্তারা বলেন, ‘২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে পিইসি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে দেশের শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ মহল থেকেই এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি উঠেছিল। তার-ই প্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে পিইসি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দিয়েও তা বাতিল করা হয়নি। এ পরীক্ষা চালুর ফলে অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। যে কোনো উপায়ে ভালো ফলাফল করাই একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। ফলাফল নির্ভর শিক্ষা হওয়ায় প্রাইমারি স্তরেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। আবার প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় মানসিক চাপ সইতে না পেরে কয়েকজন শিশু আত্মহত্যা করেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর পিইসি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার পর ১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানান বক্তারা।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার

বক্তারা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমে এসেছে, হাজার হাজার কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে যাদের বছরে মুনাফা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা, বাজারে চলছে গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা। সৃজনশীলতার নামে মুখস্ত নির্ভরতা বেড়েছে। এছাড়াও আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ধরন, ছাত্র - শিক্ষক অনুপাত, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অপ্রতুল আয়োজন, প্রশিক্ষণের দুর্বলতা বিবেচনায় না নিয়ে একের পর এক নতুন নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন বিএনপি- জামায়াত সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০ বছর(২০০৬-২৬) মেয়াদী কৌশলপত্র তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারে সময়ে তা বাড়িয়ে ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত করা হয়। এর মূল কথা হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ধীরে ধীরে প্রাইভেটে পরিণত করা। এর অংশ হিসেবেই নামে-বেনামে ছাত্রদের বেতন-ফি বাড়ছে, বাণিজ্যিক  সান্ধ্যকালীন কোর্স-ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১টি বিভাগ ও অনুষদে ৮৩টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টি বিভাগে নাইটকোর্স চালু আছে। এসব কোর্সের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন ও কোর্সের সাথে যুক্ত শিক্ষকরা। বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছাত্র সমাবেশে উপস্থিত ছাত্ররা

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান সৃষ্টি-বিতরণ-সংরক্ষণ হলেও তা ভুলে গিয়ে শিক্ষাকে আজ পণ্যে পরিণত করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে দোকানে পরিণত করেছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি নাইটকোর্সের নামে শিক্ষা বাণিজ্য চলতে দেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন। এর ভিত্তিতেই মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে এসব কোর্স বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়। অতীতেও এরকম অনেক ফাঁকা কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। আমাদের সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও  ছাত্রসমাজ এ ধরনের  বাণিজ্যিক কোর্স অতি দ্রুত বন্ধে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ দেখতে চায় ‘

বক্তারা আরও বলেন, ‘কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের একক দখলদারিত্ব বিরাজ করছে। ১ম বর্ষে আসা একজন শিক্ষার্থীকে সিটের জন্য ছাত্রলীগের কাছে দাসখত দিয়ে হলে উঠতে হয়। এরপর শুরু হয় গেস্টরুম-গণরুমের নির্যাতন। ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে চলে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়ার আয়োজন। বিরোধী মতকে দমন করা হচ্ছে লাঠির জোরে,হামলা করে। বিগত বছরগুলোতে হাফিজ, আবু বকর, আবরার হত্যাকাণ্ড তারই প্রমাণ। তাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নির্মাণে এই সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।’

সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) বাতিল করে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার মাধ্যমেই মূল্যায়ন কার্যক্রম বজায় রাখা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের জোর দাবি জানান।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042600631713867