দুর্নীতিরোধে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার খাতা আর পরীক্ষার্থীদের নিজ উপজেলায় মূল্যায়ন করা হবে না। এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়ন করতে পাঠানো হবে। চলতি বছর থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। মূল্যায়িত উত্তরপত্রের নম্বর মুদ্রণ করে টেবুলেশন শিট প্রস্তত করে সিল স্বাক্ষরসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জেলায় পাঠানো হবে। পরীক্ষায় দুর্নীতি রোধ করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, একশ্রেণির অভিভাবক, শিক্ষক ও কিন্ডারগার্টেনের মালিক মিলে জিপিএ ৫ পাওয়ানোর ধান্দায় লিপ্ত হচ্ছেন। পরীক্ষার্থীদের খাতা নিজ উপজেলায় মূল্যায়ন করার বিদ্যমান প্রক্রিয়া তাদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠেছে। দেখা গেছে, খাতা মূল্যায়নকালে কোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করার পরও কৌশলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহায়তায় অভিভাবকরা সন্তানের বিদ্যালয়ের খাতা পছন্দসই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে দেখিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, পরস্পরের যোগসাজশে খাতায় নম্বর বাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ফল ভালো দেখাতে বরগুনার একটি উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজ পরীক্ষার্থীদের খাতা নিজেরাই দেখেছেন। আবার রংপুরের কয়েকটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা খাতা জালিয়াতির সময় ধরা পড়েছেন। গত বছরের সমাপনী পরীক্ষায় নিজ সন্তানের ফল ভালো করাতে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নেওয়ায় একজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চলতি বছর থেকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ বছর থেকে এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়ন করা হবে। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আগামী ১৭ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। ২৪ নভেম্বর শেষ হবে এ পরীক্ষা। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ২৪ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। এতে পরীক্ষার সময়সূচি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, পরীক্ষার ফি নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের নিয়মে এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলার পরীক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়নের প্রস্তাব দেন তারা। সবার সম্মতিতে চলতি বছর থেকেই এ নিয়ম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে নির্দেশ দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো: আকরাম-আল হোসেন। এ বিষয়ে অবহেলা, দেরি বা অনিয়ম দেখা গেলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেন তিনি। অভিযুক্তদের নাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশও দেয়া হয়।
এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গত বছরের অভিজ্ঞতা ২৪ আগস্টের সভায় তুলে ধরেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।