শান্তিপূর্ণ ও নকলমুক্ত পরিবেশে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক ও মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথমদিন প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার প্রথমদিন গতকাল অনুপস্থিত প্রাথমিক সমাপনীতে অনুপস্থিত ছিল ৮৬ হাজার ৪৮০ জন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে পাঠানো এই অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জন দেখানো হয়েছে ইবতেদায়ির; অন্যরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর। অথচ ইবতেদায়িতে কেন্দ্রে উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ৮৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ; এ হিসেবে অনুপস্থিতি হয় প্রায় ৪৯ হাজার।
এই দুই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মোট ২৯ লাখ তিন হাজার ৬৩৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এবার অংশ নিচ্ছে ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৭ জন। আর ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে বসছে তিন লাখ ৫০ হাজার ৩৭১ জন।
ইবতেদায়িতে এবার গতবারের তুলনায় ৩০ হাজার ৯৮৩ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। তবে প্রাথমিকে গতবারের তুলনায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৬১৫ জন পরীক্ষার্থী কমেছে। এই পরীক্ষা ২৪ নভেম্বর শেষ হবে। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও সচিব আকরাম-আল-হোসেন গতকাল সকালে রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
প্রতিমন্ত্রী কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারা দেশে পরীক্ষা সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও স্বতস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সারা দেশে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করছেন। তাদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে পরীক্ষার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা সুন্দরভাবে শেষ করতে মনিটরিং সেলের সঙ্গে জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনভাবে যেন প্রশ্নফাঁস না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি করছে। পরীক্ষার আগে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানো কয়েকটি লিংক শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব বলেন, সারা দেশে কোথাও কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।
এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এএফএম মনজুর কাদির জানান, ‘পঞ্চম শ্রেণীর খাতা মূল্যায়ন নিয়ে প্রতিবছর নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে এ বছর এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
মহাপরিচালক বলেন, প্রতি বছর ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এজন্য একটি আলাদা বোর্ড তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা উঠে যাচ্ছে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা নীতিমালা-২০১০’ অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হচ্ছে। পরীক্ষা থাকবে কি থাকবে না সে সংক্রান্ত ফাইল মন্ত্রণালয়ে চালাচালি করা হচ্ছে। সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করার পর এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রাথমিক সমাপনীর মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ১১ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ জন ও ছাত্রী ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৬৭ জন। অন্যদিকে ইবতেদায়ি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৮৭ হাজার ৮২ জন এবং ছাত্রী এক লাখ ৬৩ হাজার ২৮৯ জন।
সূচি অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে আজ ১৮ নভেম্বর বাংলা, আগামীকাল ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২০ নভেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২১ নভেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং ২৪ নভেম্বর গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আর ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে আজ ১৮ নভেম্বর বাংলা, আগামীকাল ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং বিজ্ঞান, ২০ নভেম্বর আরবি, ২১ নভেম্বর কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং ২৪ নভেম্বর গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে দুপুর ১টায় শেষ হবে। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে। মোট ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতে ১০০ করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
মোট সাত হাজার ৪৭০টি কেন্দ্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে সাত হাজার ৪৫৮টি এবং আটটি দেশে ১২টি কেন্দ্র রয়েছে। দেশের বাইরে সৌদি আরবে চারটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুইটি এবং বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, লিবিয়া, গ্রিস ও কাতারে একটি করে কেন্দ্র রয়েছে। বিদেশের কেন্দ্রগুলোতে মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৬১৫ জন; যার মধ্যে ২৮৯ জন ও ছাত্রী ৩২৬ জন।