প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, প্রাথমিক স্তরে গাণিতিক দক্ষতা ও ভাষাগত প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তুলতে হবে, যা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। রোববার (২১ অক্টোবর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের উদ্বোধনী ও অবহিতকরণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, অচিরেই দেশর সব প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হবে। গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও সক্ষমতা যাচাই শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে গণিত ভীতি দূর করা সম্ভব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, একটি শিশুর চিন্তা ভাবনা ছোট বেলা থেকেই গড়ে ওঠে তার পেছনে মূল ভূমিকা থাকে পরিবার ও স্কুলের। আমাদের দায়িত্ব হলো সবটুকু শ্রম ও মেধা ব্যয় করে শিশুদের এমন একটি অবস্থা নিশ্চিত করা যেখানে একটি শিশু আনন্দের সাথে শিক্ষা লাভ করবে, কোন কিছু মুখস্থ বিদ্যার আয়ত্ত না করে বরং বুঝে তা মেধা দিয়ে অর্জন করতে সক্ষম হয়। আমার কাছে মনে হয় শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতিটি একবার ধরিয়ে দিতে পারলে তারা নিজেরাই শিখে নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন গণিত শেখার পদ্ধতি যদি আমরা প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছাতে পারি , তবে দেশটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। সৃজনশীল মেধার, যুক্তিশীল একটা প্রজন্ম গড়ে উঠবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর এক ধরনের ভীতি কাজ করে। এটি কাটিয়ে তুলতে অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গণিতের ওপর পারদর্শী করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এ শিক্ষাবিদ।
অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, দেড় শতক ধরে আমরা গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করেছি। শুরু থেকেই এটাকে আমরা প্রতিযোগিতা না বলে উৎসব বলি, “গণিত উৎসব”। গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি গণিত কে কেউ যেন ভয় না পেয়ে আনন্দের সাথে সমাধান করে। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক , এদের কাছে গণিত অলিম্পিয়াড বার্তা পৌছানোর জন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের সিন্ধান্ত নিয়েছে। এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
মৌসুমী মৌ’র সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ মনজুর কাদির,অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী,প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাধারন সম্পাদক মুনির হোসেন , প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য,২০০১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড এর যাত্রা শুরু হয়। ১৭ টি জেলার ১৭ উপজেলার ৮০ টি স্কুলের প্রতিটি স্কুল থেকে ৩ জন শিক্ষককের প্রশিক্ষণে মোট ২৪০ জন শিক্ষক নিয়ে গণিত অলিম্পিয়াড শুরু হয়।