প্রাথমিকের কর্মঘণ্টায় বৈষম্য - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকের কর্মঘণ্টায় বৈষম্য

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

বঙ্গবন্ধু আজীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অথচ বৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষা। এ থেকে মুক্ত করার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। তদুপরি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুনভাবে যোগ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মঘণ্টার বৈষম্য। দুই শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শিফটের ছুটি হবে সোয়া ৩টায়, অপরদিকে দ্বিতীয় শিফটের ছুটি হবে ৪টায়।

এতে দ্বিতীয় শিফটের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একই দেশে একই পদবি, বেতন স্কেলে শিক্ষকের ২ ধরনের কর্মঘণ্টার নজির আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। শুধু বৈষম্য নেই বই বিতরণে। ধনী, গরিব সব শিক্ষার্থী জানুয়ারির ১ তারিখে উৎসবমুখর পরিবেশে বই পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেন, শিশুদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষা দিতে হবে। বইয়ের চাপ কমাতে হবে। তাঁরই নির্দেশনায় আজ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা নেই। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক পদক্ষেপের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াচ্ছে প্রাথমিকের শিশু বান্ধব সময়সূচি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বইয়ের বোঝা। যা শিশুর শারীরিক ও  মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ করছে। অনেকটা জ্ঞান অর্জনমূখী শিক্ষা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে।

শুধু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নয়, হাইকোর্ট বইয়ের বোঝাসহ শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন শাস্তিযোগ্য কর্মকাণ্ড হিসেবে রায় দিয়েছেন। আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু দেখে ও শুনে যাচ্ছে। কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। প্রধানমন্ত্রী কথা ও হাইকোর্টের রায় কার্যকর করা বা পদক্ষেপ না নেয়া কেন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, তা আমার জানতে ইচ্ছে করে। ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। শিক্ষক সংকট, পাঠদান বর্হিভূত কাজের চাপ, বছরের পর বছর শিক্ষকের ন্যায্য প্রাপ্তিতে সময়ক্ষেপণ করে শিক্ষকের ওপর চাপ প্রয়োগ কতটা যুক্তিযুক্ত? জবাবদিহিতা থাকবে শুধু শিক্ষকের একার নয়, সবার ওপর। ভাবতে অবাক লাগে প্রধানমন্ত্রী ও হাইকোর্টের নির্দেশ পাশ কাটিয়ে বহাল তবিয়তে সময় কাটাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। 

কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কোন আলাদা মন্ত্রণালয় নেই। শিশুদের সব দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। প্রাথমিকের অনেক কল্যাণকর উদ্যোগ ‘ওয়ান ডে ওয়ার্ডসহ বহু উদ্যোগ শিক্ষকরা সব শিশুর মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। মুজিববর্ষের শুরুতে সময়সূচির বৈষম্য হৃদয় বিদারক। বিপুলসংখ্যক শিশুকে খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, শিশুর প্রতি কোন ধরনের ভালবাসা? শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা ছিল হৃদয় নিংড়ানো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষার প্রতি আন্তরিক প্রয়াসে দেশ-বিদেশে শিক্ষাবান্ধব সরকার হিসেবে সমাদৃত। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের সকাল বেলা আরবি পড়ার সুযোগ দিয়ে ও কোন অবস্থাতে বিকাল ৩টার পর বিদ্যালয়ের সময়সূচি রাখা ঠিক হবেনা। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষকদের হৃদয়ে ১০ ও ১১ গ্রেডের যন্ত্রণা রয়েছে। সেখানে কর্মঘন্টার বৈষম্য অনেকটা ‘কাটা গায়ে নুনের ছিটা’র মতো। ভালবাসার ও  স্নেহের মাধ্যমে যেমন শিশুর মাঝে অবস্থান করতে হয়। তেমনি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকদেরও ভালবাসা দিতে হবে।
 
হুমকি, ধামকি, পরিপত্র কিছুই মানসস্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অর্জন আনতে পারেনা। ঢিলেঢালা সময়ক্ষেপণ কার্যক্রম প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সব শিশুর জন্য শিশুবান্ধব সময়সূচি ও কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের বইয়ের চাপ কমাতে আশুব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে কোন আর্থিক সংশ্লেষ নেই। এতে বঙ্গবন্ধু ও শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বিশাল উদ্যোগ সফল হবে। আমাদের দেশের জনগণের একটি বদ্ধমূল ধারণা ‘বেশি বেশি বই, বেশি জ্ঞান অর্জন’। এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে অভিভাবকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করতে চাচ্ছেন না। আরবি পড়া, খেলাধুলা, খানিকটা স্বস্তি ও পারিবারিক কাজে বাবা মাকে সহযোগিতা করার জন্য শিশুবান্ধব সূচির বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রীর সরকারিকৃত বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করতে সব শিশুর জন্য অভিন্ন ব্যবস্থা আজকের দিনে জরুরি। এব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি। 

লেখক: মো. সিদ্দিকুর রহমান : সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035572052001953