প্রাথমিকের বেতন বৈষম্য : প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র ভরসা - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকের বেতন বৈষম্য : প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র ভরসা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

অর্থ মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। হতভাগা প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মতো প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মর্যাদায় ১০ম গ্রেড। স্বাভাবিকভাবে পরবর্তী ১১তম গ্রেড সহকারী শিক্ষকদের। এ প্রত্যাশা কোনো মতেই অযৌক্তিক নয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষকদের এ সমস্যা সমাধানে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সময়ক্ষেপণ করে আসছে।  গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে বিমাতাসুলভ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা সহকারীদের ১১তম গ্রেডের পরিবর্তে ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়ে ছিল। অথচ গত ৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছে। বিষয়টি অনেকটা মায়ের চেয়ে মাসির বেশি জান্তার মতো।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী সামসুল হুদা চৌধুরী শিক্ষকদের আর্থিক বিষয় নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কে বলেছেন, `অর্থ মন্ত্রণালয় অনেকটা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকার মতো কাজ করে। ট্রাফিক পুলিশ হাত তুললে যেমন সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ। তাদের হাতের ইশারায় অনেক প্রয়োজনীয় জরুরি কাজ স্থবির বা ক্ষতি হয়ে যায়। শিক্ষকদের আর্থিক বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় সম্মতির আদেশ দিলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি দেয়ার সুযোগ থাকতো না।'

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রতি মায়ের মতো দরদ থাকলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে প্রস্তাব প্রেরণ করা হতো। প্রস্তাব নাকচ হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক নেতাদেরকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করতে দেখা গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই প্রাথমিক শিক্ষকদের মুখ্য অভিভাবক। অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকদের ১০ম ও ১১তম গ্রেড দেয়ার মূল দায়িত্ব তাদের। এক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই তালবাহানা বা সময়ক্ষেপণ করা কাম্য নয়। 

যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বৈষম্য নিরসনের অঙ্গীকার রয়েছে। সকল সরকারি কর্মচারী ২য় শ্রেণির ১০ম গ্রেড পেলে প্রধান শিক্ষকরা কেন পাবে না? অথচ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ১১তম গ্রেড দেয়া হলো। কেন সহকারীদের শিক্ষকদের নিচের স্কেল দেয়া হলো না? কেন ষড়যন্ত্র করে প্রাথমিক শিক্ষকদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বিঘ্নিত করা হচ্ছে? এজন্য দায়ী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘৃণ্যচক্রের হোতারা। 

প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের প্রতি সবিনয় নিবেদন, মন্ত্রণালয়কে এ চক্রের কবল থেকে বের করে আনুন। শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। প্রাথমিকের নেতৃত্বে বেশিরভাগই শিক্ষকদের স্বার্থের চেয়ে নেতৃত্বের তথা স্বীয় স্বার্থ বড় করে দেখে আসছেন। নেতৃত্বের মোহ তাদের ঐক্যের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আজকে প্রয়োজন সবার ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া। নেতারা এ সময়ে সবাই রাজা, না ভেবে সবাই প্রজা ভেবে কাজ করুন। এর মাধ্যমেই আপনাদের সফল নেতৃত্ব পাশাপাশি শিক্ষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। 

অনেক নামিদামি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংস্পর্শে আপনারা বিচরণ করে থাকেন। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, বৈষম্য দূরীকরণে এত সময়ক্ষেপণ কেন? তাহলে কি সবই শিক্ষকদের বোকা বানানো? 

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বৈষম্য নিরসনে সংগ্রাম করুন। শিক্ষকদের চাদরের মাঝে অবস্থান করুন। নেতা-নেত্রীর ছবি দেখিয়ে বা ছত্রছায়ায় থেকে শিক্ষকদের মাঝে ভুয়া ধুম্রজাল সৃষ্টি করবেন না। কতিপয় নেতাদের ধর্মঘট করার হুমকি আমাকে বিস্মিত করেছে। শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ না করে তালা লাগানোর হুমকি পাগলের প্রলাপ ব্যতিরেকে কিছু নয়। বর্তমানের সাংগঠনিক শক্তি ও ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের সাংগঠনিক ভিত ও শক্তি এক নয়। 

বঙ্গবন্ধু আজীবন বৈষম্য দূরীকরণে সংগ্রাম করেছেন। তাঁরই সুযোগ্য কন্যাও একই আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমার বদ্ধমূল ধারণা, প্রাথমিক শিক্ষায় বেতন বৈষম্যসহ সময়সূচি ও সরকারি কর্মচারীর মতো নন-ভ্যাকোশনাল সুবিধাসহ শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা, ৩ বছর পরপর প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ প্রাথমিকের নেতাদের ও তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। সাধারণ শিক্ষকদের সমস্যার কথা বেমালুম ভুলে মন্ত্রীসহ কর্মকর্তাদের গুণগান আর সেলফি নিয়ে মশগুল থাকতে দেখা গেছে। 

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক সরকার জিয়াউর রহমানের গ্রাম সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রাথমিক শিক্ষকেরা গর্জে উঠেছিল। আজ বৈষম্যহীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে মৃদু গর্জনও শোনা যাচ্ছে না। বাস্তবে বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কতটুকু ভাবছেন বোধগম্য নয়। আজকে যারা শিক্ষকের আঁচল ছেড়ে রাজনৈতিক নেতাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তির পাশে তেমন একটা পাওয়া যায়নি বিগত নির্বাচনে। ঢাকার মিরপুরের সম্মানিত এমপির মতো তারা যে সরকার আসে সে সরকারের আজ্ঞাবহ। অন্যায়ের প্রতিবাদের ভাষা তাদের মাঝে নেই। অথচ মন্ত্রী, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ফুলের বড় বড় তোড়া দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ সেবক সেজে শিক্ষকদের নেতা বনে আছে। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ নির্বাচন পূর্ব থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকারের প্রাথমিক শিক্ষায় বিশাল অর্জনগুলো প্রাথমিক শিক্ষকসহ জনগণের মাঝে প্রচার করে আসছেন। তারা বৈষম্যহীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে আপোষহীনভাবে সংগ্রাম করে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবেন।

আজকের দিনে প্রাথমিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণে একসাথে কাজ করবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হোন। প্রাথমিক শিক্ষার সকল বৈষম্য শিগগির দূর করার সংকল্পে।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039708614349365