ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) নির্বাচন আগামী ৪ নভেম্বর। গত ১১ অক্টোবর তফসিল ও ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ মহলের স্বার্থে হাজার হাজার সদস্যকে ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া তিনজন নির্বাচন কমিশনারের দুজনই একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীর ঘনিষ্ঠজন ও ব্যাবসায়িক অংশীদার। জানা যায়, আইডিইবির সদস্য এখন ৫৬ হাজারের মতো। গত মেয়াদের তুলনায় সসদ্য বাড়লেও অনেক কমে গেছে ভোটারের সংখ্যা। এসব কারণে ভোটারদেরও অনেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে আহম্মদ শাহ আলমগীরকে। অন্য দুই কমিশনার হলেন নির্মল চন্দ্র সিকদার ও সৈয়দ মুরাদ রেজা। এর মধ্যে নির্মল চন্দ্র এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান মো. শামসুর রহমান, যিনি আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক। আগামীতেও একই পদে তিনি নির্বাচন করতে চান বলে জানা যায়। নির্মল চন্দ্র ও শামসুর রহমান প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসায়িক অংশীদার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সরকারি পলিটেকনিকের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমানে এনপিআই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অস্থায়ী শিক্ষকতা করছেন। ফলে এই নির্বাচন কমিশনকে ঘিরেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে বেশির ভাগ সদস্য।
তবে নির্মল চন্দ্র সিকদার বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনার হতে হবে প্রবীণ সদস্য। আর কেন্দ্রীয় কমিটি এই কমিশন গঠন করবে। এখানে রিলেশন বা আত্মীয়তার ব্যাপারে কিছু বলা নেই। আর আমার কার্যক্রমে যদি কোনো পক্ষপাতিত্ব দেখা যায় তাহলেই তো কথা উঠবে। আমি এটুকু বলতে পারি, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব।’
সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমানকে গত রবিবার রাতে ফোন দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। এরপর গতকাল সোমবার রাতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি।
জানা যায়, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১১.০৪.০১ (গ) ধারা অনুযায়ী ‘নির্বাচন তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত বার্ষিক চাঁদা পরিশোধপূর্বক সদস্যভুক্ত হলে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হইতে পারবে।’ কিন্তু হাজার হাজার নতুন সদস্য চাঁদা পরিশোধ করতে গিয়েও করতে পারেনি। এমনকি তফসিল ঘোষণার আগে চাঁদা পরিশোধ করলেও অনেককে ভোটার করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই বলছে, ঢাকা জেনিকের সভাপতি মো. খবির হোসেনের কাছে চাঁদা দিতে গেলে তিনি নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং পরের বছর আসতে বলেন। এ প্রতিবেদকের হাতে গত ৫ অক্টোবর চাঁদা পরিশোধ করা ২০০ জন, ৬ অক্টোবর চাঁদা পরিশোধ করা ৬৮৮ জনের তালিকা রয়েছে, যাঁরা ভোটার হতে পারেননি।
গঠনতন্ত্রের ১১.০৫.০২ ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের এক মাস আগে কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদিত ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর কথা বলা হলেও তা মানা হয়নি বলে সদস্যরা অভিযোগ করছেন।
আইডিইবির বর্তমান কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মল্লিক বলেন, ‘গত নির্বাচনে ভোটার ছিল ২২ হাজার। এবার সদস্য সাত হাজার বাড়লেও ভোটার কমে হয়েছে ১৬ হাজারের মতো। মূলত এখানে একটি বড় নীলনকশা হয়েছে। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্যের পক্ষের লোকজনকেই ভোটার করা হয়েছে। নির্বাচনের রেজুলেশনের আগেই কমিশনার মনোনয়ন করা হয়েছে। দুজন কমিশনারের একজন তাদের স্টাফ, আরেকজন ব্যাবসায়িক পার্টনার। এতে সহজেই বোঝা যায়, বড় কারসাজি হচ্ছে। আইডিইবির ইতিহাসেও কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা হতে যাচ্ছে। আমরা চাই, যারা ভোটার হতে চায়, তাদের সবাইকে সুযোগ দিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সদস্য বলেন, ‘যাঁরা ভোটার তালিকা করার দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা প্রথমে দেখেছেন তাঁদেরকে কে কে ভোট দেবে? বর্তমান কমিটির দুজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী আগামীতেও একই পদে নির্বাচন করতে চান। মূলত তাঁদের যাঁরা ভোট দেবেন না বলে তাঁরা মনে করেছেন তাঁদের ভোটার করা হয়নি।’
ভোটার তালিকার ব্যাপারে আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এসে কথা বলতে বলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার নির্মল চন্দ্র সিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। কমিশনকে একটি ভোটার তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা নির্বাচন পরিচালনা করব।’
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ