যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করায় প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দুইটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন করা হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, এ বিষয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত না নিয়ে আগে প্রিয়া সাহার বক্তব্য শোনা হবে যে, আসলে তিনি কি বলতে চেয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের দুইজন আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইব্রাহিম খলিল রোববার সকালে ঢাকার আদালতে আলাদা দুইটি মামলা করার আবেদন করেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে-তিনি এই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ধর্মীয় ভেদাভেদ তৈরি, দেশকে অস্থিতিশীল এবং বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসাবে এই মামলা দুইটি গ্রহণ করা না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে শুনানির পরে।
রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ''অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা যায় না। তা ছাড়া এ ব্যাপারে যিনি অভিযোগ করেছেন, সেই অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্যটা আমাদের জানা দরকার। তার আগে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিতে আমরা যাবো না।''
তিনি বলেন, ''প্রধানমন্ত্রী আমাকে বার্তা দিয়েছেন যে, এই বিষয়ে তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই। আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তিনি কি বলতে চেয়েছেন সেটা জানতে হবে। তার দেশে ফিরতেও কোনো বাধা নেই। ''
যুক্তরাষ্ট্রের 'ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি' শীর্ষক একটি আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের অংশ হিসাবে গত ১ই জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সবার সাক্ষাৎ হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত ১৭ই জুলাই হোয়াইট হাউসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২৭ জন ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তির সাথে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরা সবাই ওয়াশিংটন গত ১৬ থেকে ১৮ই জুলাই পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি ইভেন্টে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন - যার নাম ছিল 'সেকেন্ড মিনিস্টারিয়াল টু অ্যাডভান্স রিলিজিয়াস ফ্রিডম'।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এতে পাঁচ জন বাংলাদেশী এবং দু'জন রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীর একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় - যার একজন ছিলেন প্রিয়া সাহা।
তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে থেকে তার ভাষায় '৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নিখোঁজ হয়েছে', তার নিজের বাড়িঘরও আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু এর কোনো বিচার হয়নি। মি. ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন তিনি যেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সাহায্য করেন - যাতে তারা দেশে থাকতে পারে।
মিজ সাহার সাথে মি. ট্রাম্পের কথোপকথনের ভিডিওটি অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এক দিনের মধ্যেই। পড়তে থাকে অসংখ্য মন্তব্য। ফেসবুকসহ নানা প্ল্যাটফর্মে শুরু হয় বিতর্ক। সরকারের মন্ত্রীরাও কথা বলতে শুরু করেন এ নিয়ে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয় যে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের উদ্দেশ্যেই প্রিয়া সাহা এই ধরনের বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ করেছেন।
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, প্রিয়া সাহা দেশে ফিরলে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।