প্রিয় পানীয় ‘চা’ ও এর অদম্য বিস্তার - দৈনিকশিক্ষা

প্রিয় পানীয় ‘চা’ ও এর অদম্য বিস্তার

প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন |

গ্রামের অন্যসব ছেলেমেয়ের সাথে আমিও সকালবেলা মক্তবের হুজুরের কাছে আরবি পড়তে যেতাম। মসজিদ ঘরের বারান্দায় বসে আমরা সুরা মুখস্থ করতাম, কায়দা-আমপারা-কোরান শরিফ শিখতাম। পড়ার ফাঁকে হুজুর আমাকে ছুটি দিতেন তাঁর জন্য বাড়ি থেকে এক কাপ চা আনার জন্য। আমি যখন চা নিয়ে আসতাম তখন বিশেষ করে শীতের দিনে চায়ের কাপ থেকে বাষ্পধোঁয়া কু-লি পাকিয়ে ওপরের দিকে উঠত তখন নাকে এসে চায়ের খুশবু লাগত। এতে চা খাওয়ার জন্য আমার খুব লোভ হতো, কিন্তু খেতে পারতাম না। এমনকি হাইস্কুলে যখন ভর্তি হলাম তখনও চা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। তবে দু-এক আনা পয়সা জমিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বাজারে গিয়ে চা-স্টলে বসে দু-একবার চা-এর স্বাদ গ্রহণ  করেছি বটে। আব্বা দেখে ফেলেন সেই ভয়ে এত মজার চা খেয়েও আনন্দ পেতাম না। বর্তমানে যে কোনো অনুষ্ঠানে চা পরিবেশন করা একটি সামাজিক প্রথা হিসেবে গড়ে উঠেছে!

এই পানীয়টি মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল কীভাবে আজ পাঠকদের সামনে তা তুলে ধরতে চাই। আমার জানা মতে চা-চাষ শুরু হয়েছে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে আসাম অঞ্চলে। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ‘ইয়ান্দাবু’ চুক্তির মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ পাহাড়ি জমি দখল করে নেয়। তারপর মানুষকে চা-চাষে উৎসাহিত করার জন্য ওই অঞ্চলে বড় বড় উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদে জমি বন্দোবস্ত দিতে শুরু করে। শুরুতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জনাব মণিরাম দেওয়ান সবার আগে চা-চাষ শুরু করেন । তিনি ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং সিপাহী বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে আসামের চাবুয়াতে আসাম ‘টি’ কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে ভারতবর্ষে প্রথম চা-এর আবাদ শুরু করে। চাবুয়া আসামের ডিব্রুগড় শহর থেকে ২০ মাইল পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি ছোট্ট শহর। চাবুয়া চা-বাগানে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয় ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলাদেশে প্রথম চায়ের চাষ শুরু হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। বর্তমানে যেখানে চট্টগ্রাম ক্লাব অবস্থিত ঠিক সেই জায়গাতেই প্রথম চা-এর চারা লাগানো হয়েছিল। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ডানকান ব্রার্দাস বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চা-চাষ শুরু করে সিলেটের সুরমা ভ্যালির মালনীছড়ায় । তারপর ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে হবিগঞ্জের লালচান্দে এবং মৌলভীবাজারের মের্টিঙ্গাতে তাঁরা দুটো বাগান চালু করে এবং ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু করে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন।

বাণিজ্যিকভাবে চা বেচাকেনা শুরু হওয়ার আগেই জনগণের মধ্যে তা জনপ্রিয় করে তোলার কাজটি শুরু হয়। এ লক্ষ্য অর্জনে চা-কোম্পানিগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করে। তাঁরা হাটের দিন বাজারে বাজারে গিয়ে গ্রামগঞ্জের মানুষদের চা বানিয়ে বিনে পয়সায় খাওয়ানো শুরু করে। প্রথম প্রথম লোকজন একেবারেই চা খেতে চাইত না। চা-কোম্পানির প্রতিনিধিরা অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিনা মূল্যে এক কাপ চা খাওয়াত এবং এক পুঁটলি চা-পাতা, একবক্স দিয়াশলাই ও একটা ‘তামার পয়সা’ বোনাস হিসেবে তাঁদের হাতে ধরিয়ে দিত। এত কিছুর পরও ষাটের দশকে গ্রামগঞ্জে সবার বাড়িতে চা খাওয়ার প্রচলন ছিল না। তার কারণ যতটা না আর্থিক, তার চেয়ে বেশি সাংস্কৃতিক। অর্থাৎ তখনো গ্রামে চা খাওয়ার রেওয়াজটা গড়ে ওঠেনি। যাঁরা স্বচ্ছল এবং সামাজিকভাবে একটু অগ্রসর ছিলেন শুধু তাঁদের বাড়িতেই চা খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। এই উপমহাদেশের মানুষ এক সময় চা পানে অভ্যস্থ না থাকলেও ক্রমশ এর সুমধুর ঘ্রাণ ও স্বাদে আসক্ত হয়ে পড়ে।

আজকাল সচরাচর যেভাবে চা বানানো হয়-এক কাপ গরম পানিতে টি-ব্যাগ চুবিয়ে নিয়ে যার যার পছন্দ মতন চিনি দিয়ে বা না দিয়ে চা বানিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু সে যুগে এমনটি ছিল না। শহরে থাকলেও গ্রামদেশে টি-ব্যাগের কোনো প্রচলন ছিল না। গুঁড়া চা-পাতা থেকেই তখন চা বানানোর নিয়ম ছিল। চুলোর পানি টগবগ করে ফুটে উঠলে পাত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ চা-পাতা ঢেলে দেয়া  হতো এবং বেশ কিছুক্ষণ ফুটানোর পরে চায়ের কষ ঘন কালো হয়ে গেলে কাপের মুখে ছাঁকনি ধরে লিকার ঢেলে তারপর আন্দাজমতো দুধ-চিনি মিশিয়ে দিলে মজাদার এক কাপ চা তৈরি হয়ে যেত। আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে প্রতিদিন ভোরবেলা চায়ের জন্য চুলা জ্বালানো হতো এবং চা বানিয়ে খালি পেটে খাওয়া হতো। খালিপেটে চা খাওয়া যে ভালো নয়, সেটা ওই সময়ে আমাদের বাপ-চাচারা সম্ভবত জানতেন না। জানলে এমন ধরনের চা-সংস্কৃতি বাড়িতে গড়ে উঠতে পারতো না। কদাচিৎ মুড়ি, টোস্ট, কিংবা কুকি বিস্কুট চা-এর কাপে চুবিয়ে চুবিয়ে খাওয়া হতো। সে যা-ই হোক, এ চা-তে বাড়ির সবার সমান অধিকার নিশ্চিত ছিল না। চা পেতেন দাদা-দাদি, মা-চাচি, বাবা-চাচা, স্কুল বা লজিং মাস্টার, মসজিদের ইমাম, অতিথি কেউ থাকলে তাঁরা। বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা কেউ চা-য়ে ভাগ বসাতে পারত না। 

ছোটবেলায় বেশ কয়েক বছর আমি নানার বাড়িতে ছিলাম। সেখানে দেখেছি চা-খাওয়ার সংস্কৃতি ছিল একটু ভিন্ন রকম। নানা বাড়িতে সকাল ও বিকাল বেলায় চা খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ফজর নামাজ এবং আসরের নামাজের পর চা বানানো হতো এবং প্রায় প্রতিদিনই খাওয়া হতো। নানা মসজিদ ঘরে ফজর নামাজ শেষ করে ঘরে এসেই নজর দিতেন নাস্তার টেবিলের উপর চা ও মুড়ির দিকে, চা পরিবেশন করা না হয়ে থাকলে চা-এর জন্য হাঁকডাক শুরু করে দিতেন। তবে বাড়িতে মেহমান এলে দিন-দুপুরেও চা করা  হতো। উল্লেখ্য যে, নানা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী এবং পেশায় শিক্ষক ছিলেন।  নানার এক বন্ধু ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি একদিন নানাবাড়ি এসেছেন নানার সাথে দেখা করতে। আমি তাঁকে চেয়ারম্যান নানা বলেই ডাকতাম। গল্পে রত দুই বন্ধুর জন্য কাজের লোক  ‘কমলার বাপ’ যখন চা এনে পরিবেশন করলেন আমি তখন কাছেই ছিলাম। চেয়ারম্যান নানা তাঁর কাপ ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, আরেক কাপ নিয়ে এসো without sugar। তখন আমি ইংরেজি শব্দ দুটোর অর্থ বুঝেছি, আর বুঝেছি বলেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার ধারণা, দুধ-চিনি ছাড়া চা আবার কীভাবে হয় এবং ওই দিন আমি অনেক ভেবেও বুঝতে পারিনি যে, চেয়ারম্যান নানা চিনি ছাড়া চা চাইলেন কেন? চিনি ছাড়া চা খাবেনই বা কেমন করে? অনেক পরে জেনেছি ওই নানা ডায়বেটিক রুগী ছিলেন।

বর্তমানে চা-পিপাসু মানুষেরা বহু স্বাদের ‘চা’ যেমন- দুধ-চা, লেবু-চা, আদা-চা, পুদিনা পাতার-চা, তেতুল-চা, চিনি ছাড়া-চা, ভেষজ-চা, ইনস্ট্যান্ট-চা, থ্রি-ইন-ওয়ান, সাত রং এর-চা, ইত্যাদি খেয়ে তৃপ্তি পান। তবেblack tea, green tea এবং white tea আরও বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। স্বাদে, গন্ধে ও রং-এ ভিন্ন ভিন্নত বৈশিষ্ট্য আছে বলেই চা-প্রেমিকরা চা এর বিভিন্ন নাম দিয়েছেন । পাতার গুণাগুণ ও সংগ্রহে সময়ের তারতম্যের কারণে নামের ভিন্নতা হয়ে থাকে। মূলত সকল ধরনের চা একই প্রজাতির ঝোপ জাতিয় গাছ Camellia sinensis থেকে সংগৃহীত হয়। চা-কফি খাওয়ারও একটা আদব কায়দা আছে। সেটা শিখেছি ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ঢাকায় এসে উঠেছি বড় মামার বাসায়। কোনো এক ছুটির দিন সকালবেলা নাস্তা শেষে আমরা মামা-ভাগ্নেসহ চারজন বসে আরাম করে চা খাচ্ছি। ছোট মামা গরম চা-এর কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর সুড়ুৎ সুড়ুৎ আওয়াজ তুলছেন। বড়মামা এক সময় রেগে গিয়ে বললেন, ক’দিন পর বড় চাকরি করবি অথচ এখনো চা খাওয়া শিখলি না। আওয়াজ করে চা খাওয়া bad manner। ছোট মামা বেশ লজ্জা পেলেন, আর আমি চা খাওয়ার ম্যানারটা শিখতে পারলাম।

‘ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়’ বইটিতে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে চা পান করানোর একটি মজার কাহিনী উল্লেখ করেছেন। কবির ভাষায় - কবি নজরুল ছিলেন চা-খোর। কিছুক্ষণ পর পর চা পান না করলে তাঁর চলতো না। ফরিদপুরে বঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় সমিতির একটি অধিবেশন উপলক্ষে কবি নজরুল সেখানে এসেছিলেন। কবির সম্মানে জসীম উদ্দীনের উদ্যোগে সেই রাতে গানের জলসা বসানো হলো। সেখানেই সেই চা-কাহিনীর সৃষ্টি। চা না পাইয়া কবি অস্থির হয়ে উঠলেন এবং ঐ রাত্রিবেলায় দেখা দিল এক বড় ধরনের ঘটনার। “এই পাড়াগাঁয়ে রাত্রি বেলায় চা কোথায় পাইব? নদীর ওপারে গিয়া যে চা লইয়া আসিব, তাহারও উপায় নাই। রাত্রিবেলা কে সাহস করিয়া এত বড় পদ্মা-নদী পাড়ি দিবে? তখন তিন-চার গ্রামে চায়ের অনুসন্ধানে লোক পাঠানো হইল । অনেক খোঁজাখুঁজির পর আলিম মাতব্বরের বাড়ি হইতে সামান্য পরিমাণ চায়ের পাতা পাওয়া গেল। তিনি একবার কলিকাতা গিয়া চা খাওয়া শিখিয়া আসিয়াছিলেন। গ্রামের লোকদের চা খাওয়াইয়া তাজ্জব বানাইয়া দিবার জন্য কলিকাতা হইতে তিনি কিছু চা-পাতা লইয়া আসিয়াছিলেন। গ্রামের লোকদের খাওয়াইয়া চা-পাতা যখন কম হইয়া আসিত, তখন তাহার সহিত কিছু শুকনা ঘাসপাতা মিশাইয়া চায়ের ভাণ্ডার তিনি অফুরন্ত রাখিতেন। তিনি অতি গর্বের সহিত তাঁহার কলিকাতা-ভ্রমণের আশ্চর্য কাহিনী বলিতে বলিতে সেই চা-পাতা আনিয়া কবিকে উপঢৌকন দিলেন। চা-পাতা দেখিয়া কবির তখন সে কী আনন্দ! এই মহামূল্যবান চা এখন কে জ্বাল দিবে? এ-বাড়ির বড় বৌ, ও বাড়ির ছোট বৌ-সকলে মিলিয়া পরামর্শ করিয়া যাহার যত রন্ধনবিদ্যা জানা ছিল সমস্ত উজাড় করিয়া সেই অপূর্ব চা-রন্ধন-পর্ব সমাধা করিল। অবশেষে সেই চা ক্যাটলিতে ভর্তি হইয়া বৈঠকখানায় আগমন করিল। কবি তো মহাপুরুষ। চা পান করিতে করিতে চা-রাঁধুনীদের অজস্র প্রশংসা করিয়াছিলেন। পরবর্তীকাল বহু গুণীজনের কাছে এই চা খাওয়ার বর্ণনা করিয়া কবি আনন্দ প্রকাশ করিতেন”। 

লেখক: প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়ন), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা। 

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036180019378662