পরিত্যক্ত সব কিছুই ফেলনা নয়। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে এ কথা প্রমাণ করে দিয়েছেন কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার এক বাসিন্দা। তিনি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য শফিকুল ইসলাম। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে নির্মাণাধীন বাড়িটির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি থাকলেও এরই মধ্যে এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
প্লাস্টিক বোতলের বাড়িটি এক নজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছে মানুষজন। বাড়ির মালিক শফিকুলের কাছে প্লাস্টিক বোতলের বাড়ি তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাচ্ছে তারা। বাড়ি দেখতে আসা উৎসুক মানুষের নানান প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখেই দিচ্ছেন শফিকুল।
হোমনা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লটিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ডান পাশে ছোট-বড় নানা রঙের প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীরা এক পলক দেখে থেমে যায়। বাড়িটির কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেখে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এত মজবুত ও দর্শনীয় ডিজাইনের বাড়ি নির্মাণ করা যায়, তা ভেবেই নানান প্রশ্ন করে পথচারীরা। আর এসব প্রশ্নের যৌক্তিক সব উত্তর দেন শফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শফিকুল ইসলাম জানান, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে একটি জাতীয় পত্রিকায় জাপানে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তিনতলা বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে প্রতিবেদন পড়েন তিনি। সেই থেকে তাঁর মনে এ বিষয়ে কৌতূহল বাড়তে থাকে। পরে ইউটিউবে প্লাস্টিক বোতলের বিভিন্ন ব্যবহার দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই বাড়ি তৈরি করবেন। এ ভাবনা থেকেই বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি।
শফিকুল জানান, বাড়িটি নির্মাণ করতে এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। বাড়ির উঠোনে আরো ২০ হাজার বোতল মজুদ আছে। ঢাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন ভাঙারি দোকান থেকে এক লাখ পরিত্যক্ত বোতল কিনে সেগুলোর ভেতরে বালি ভর্তি করেন। বালি ভর্তি এসব বোতল দিয়ে মাটির নিচ থেকে আড়াই ফুটের বেশি ভিত তৈরি করেন। তারপর এর ওপর দেয়ালে গাঁথুনি দিয়েছেন।
এ বাড়িটির বিশেষত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম জানান, ছাদ দেওয়ার পর বাড়িটির পূর্ণ সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। ভূমিকম্প হলেও বাড়িটির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে প্লাস্টিকের ভেতরে বালু থাকায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে না। এ ছাড়া বালির কারণে গরমের সময় ঘরের ভেতরের পরিবেশ ঠাণ্ডা আর শীতের সময় উষ্ণ থাকবে বলেও উল্লেখ করেন শফিকুল।
প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম জানান, ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির খরচের চেয়ে অন্তত ৩০ ভাগ কমে এ বাড়ি তৈরি করা সম্ভব।
প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা বাড়িটির স্থায়িত্ব কেমন হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোমনা উপজেলা প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা বাড়িটির কথা শুনেছি। পরিদর্শন করা শেষে বাড়িটির স্থায়িত্ব কেমন হবে, সে বিষয়ে বলতে পারব।