আজ জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পড়ব বই গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। দেশে তৃতীয়বারের মতো উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি।
২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা একটি পরিপত্র জারি করে ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণা করে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদ পরিপত্র (৭ নভেম্বর ২০১৭) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের (১৪ ডিসেম্বর ২০১৭) আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা অনুমোদিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) বরাবর ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।
তাতে বলা হয়, সরকার ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে উদযাপন এবং দিবসটিকে ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দিবসটি যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। তবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ও বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করে।
গ্রন্থাগারিকের পদ সৃজন : ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (শাখা-১৩) জনবল কাঠামোবিষয়ক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম) ও উচ্চমাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) স্তরে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্কুল-কলেজে পদটি এমপিওভুক্ত হলেও সমমানের মাদ্রাসায় করা হয়নি।
এ বৈষম্যের অবসান জরুরি। এছাড়া সরকার ইতিমধ্যে ক্লাস রুটিনে ‘গ্রন্থাগার বিজ্ঞান’কে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিলেও অনেক প্রতিষ্ঠান তা পালন করছে না। বিষয়টির ‘মনিটরিং’ হওয়া দরকার। আমরা মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিক স্তরের মতো দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে আসছি।
পাঠকসৃজন প্রকল্প : বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার ২০১০ সাল থেকে ঢাকা জেলার বাড্ডা থানার বেরাইদ ইউনিয়নকে (হালে ডিএনসিসি ওয়ার্ড নং ৪২) ‘পাঠকসৃজন পাইলট প্রকল্প’ ধরে কাজ করছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনের আগে থেকেই এখানকার স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানকে রুটিনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন : বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোকে টেকসই করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের কাছে তিনটি দাবি পেশ করে- ১. বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো ক, খ ও গ শ্রেণিভুক্ত করে স্থায়ী মঞ্জুরির আওতায় আনা হোক। গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি ও পদটি এমপিওভুক্ত করে মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিকের সমান বেতন স্কেল দেয়া হোক।
২. অনুদান প্রদানে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালু করা হোক। ৩. অনুদান কমিটিতে বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তাহলে গ্রন্থাগারগুলো টিকে যাবে। জ্ঞানভিত্তিক, আলোকিত, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে এর বিকল্প নেই।
পুনশ্চ : গ্রিক শব্দ ‘Libre’ থেকে ‘Library’ শব্দের উৎপত্তি, যার বাংলা অর্থ ‘গ্রন্থাগার’। গ্রন্থাগার হচ্ছে বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা, সাময়িকীসহ অডিওভিজ্যুয়াল সামগ্রীর ভাণ্ডার, সংগ্রহশালা, সংরক্ষণাগার। পাঠক গ্রন্থাগারে বসে বই পড়তে পারেন। শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পড়ার সামগ্রী বাড়িতেও নিতে পারেন।
প্রবাদ আছে, ‘একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার গ্রন্থাগার, মহাফেজখানা (আর্কাইভ/সংগ্রহশালা), জাদুঘর ধ্বংস করে দাও।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িয়া আছে।’ যে জাতির গ্রন্থাগার যত সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত।
লেখক: এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া, সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার।