ভারতে প্রতি ৫৫ মিনিটে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে থাকে। পড়াশোনায় অতিরিক্ত চাপ সইতে না পেরে তারা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। সোমবার এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যম।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা গবেষণায় জানা চেছে, দেশটিতে ২০১৪ থেকে শুরু করে গত তিনবছরে ২৬ হাজার ৪৭৬ জন শিক্ষার্থী আত্মঘাতী হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ২০১৬ সালে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর মোট ৯ হাজার ৪৭৪ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছিল। অর্থাৎ দেশটিতে প্রতি ৫৫ মিনিটে দেশে একজন করে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। ২০১৭ সালের মে মাসে কেবল মধ্যপ্রদেশের একাংশে কমপক্ষে ১২ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছিল। আত্মহত্যার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অবসাদে ভুগছিল তারা। তাই আত্মহত্যা করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের সাতনা, ছাতারপুর, গুনা, ইন্দোর, বালাঘাট, গোয়ালিওর, টিকমগড়, ভিন্দ, জব্বলপুর ও ভোপাল এলাকায় ওই ১২ আত্মহত্যা হয়েছে। তবে সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পড়াশোনার চাপের পাশাপাশি পারিবারিক অশান্তি, মা–বাবার আলাদা হয়ে যাওয়া, বন্ধু–বান্ধবদের সঙ্গে মনোমালিন্য, প্রেমের সম্পর্কও পড়ুয়াদের আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ভারতের মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দুটির ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। ২০১৬ সালে মহারাষ্ট্রে ১,৩৫০ জন এবং পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে আত্মহত্যার সংখ্যা যথাক্রমে ১,১৪৭ ও ৯৮১ জন।
এ সম্পর্কে সমাজবিদ সমতা দেশমানে বলেন, ‘সমাজ এখন অনেক বদলে গেছে। নতুন সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সত্যিই খুব কঠিন। যদিও এখন আমরা সমাজে থেকেও সমাজের বাইরে বাস করছি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে পদে পদে রয়েছে প্রতিযোগিতা। শুধু সেই প্রতিযোগিতা পড়াশোনা নিয়ে নয়, সমস্ত দিক দিয়েই। যে কারণে তাদের মধ্যে অবসাদ আসছে। যারা এই চাপ নিতে পারছে তারা বেঁচে রয়েছে। অন্যরা আত্মহত্যার দিকে এগোচ্ছে।’
সমতা দেশমানে মা–বাবাদের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজের সন্তানের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করবেন না। তাকে নিজের মতো করে গড়ে উঠতে দিন। দেখবেন সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে আপনার সন্তান।
তার কথায়, আমাদের ছোটবেলায় পড়াশোনা নিয়ে বাবা-মায়েরা কিন্তু এতটা চাপ দিতেন না। আমরা সেটি দিই অনেক সময়ে বাধ্য হয়েই।