সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মারাকে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান।
মীজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। পুলিশ বা র্যাবের অভিযানে এর শুদ্ধি সম্ভব নয়।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে জবি শিক্ষক সমিতি আয়োজিত আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে এক মানববন্ধনে উপাচার্য এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা অতীতেও দেখেছি, নাসিরনগর বা রামুতে শুধুমাত্র ফেসবুক স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করে কী ধরনের হামলা ঘটেছে। তাই আমার মনে হয় এর বিচার আইনের মাধ্যমে এসব স্ট্যাটাসধারীদের হওয়া উচিত। তবে, সেটা কোনোভাবেই কোনো ছাত্র বা সাধারণ মানুষ করতে পারে না। বুয়েটের যে স্থানে ফাহাদের মারার ঘটনা ঘটেছে সেখানে হল প্রসাসন, প্রাধ্যক্ষ, হাউজ টিউটর ছিল তারা তাদের কাজে গাফিলতি করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেহেতু বলেছেন, নিজ সন্তান ভেবে ফাহাদ হত্যাকারীদের বিচার করবেন। ইতোমধ্যে ১২ জনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সেহেতু আমরা আশ্বস্ত হতে পারি; এই ঘটনার বিচার হবে।
জবিতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে উপাচার্য বলেন, একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রের বিচার করবে এটা হতে পারে না। আমি এই মুহূর্তে ঘোষণা দিচ্ছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি, শিবির, ছিনতাইকারী বা অন্য যে কেউ হোক কারো গায়েই কোনো অবস্থাতেই কোনো ছাত্রের হাত দেয়া যাবে না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো ঘটনা কোনোভাবেই ঘটতে দেবো না। আমরা যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাই, তাহলে আপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবো।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় সমিতির অন্যান্য সদস্য ও শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা অংশ নেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় উপাচার্য ভবনের সামনে ৪ ছাত্রদল কর্মীকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। যদিও এই ব্যাপারে উপাচার্যের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার (০৬ অক্টোবর) দিনগত রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ফাহাদকে মারধর করে হত্যা করা হয়। পরে সোমবার (০৭ অক্টোবর) হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১০ জনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।