আসনসংখ্যার মাত্র ১০ গুণ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেয়ায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া হতে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। অথচ তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে পরীক্ষার ফি। ফলে প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে আয়োজিত দেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। টাকা দিয়ে আবেদন করার পরও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করছেন বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ বছর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩ হাজার ৫৫৫ আসনের বিপরীতে প্রায় ৭৪ হাজার ৪৫৬টি আবেদন জমা পড়েছে। সমন্বিতভাবে আয়োজিত এই ভর্তি পরীক্ষার ফি ধার্য করা হয় এক হাজার টাকা। আসনসংখ্যার ১০ গুণ প্রার্থীকে বাছাই করার কারণে শুধু মোট জিপিএ ৯ দশমিক ১৫ (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত) বা এর ঊর্ধ্বের আবেদনকারীরা প্রবেশপত্র পাচ্ছে, যাদের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫৫০। আবার যারা সব বিষয়ে অপশন দেয়নি, তারা মেধা তালিকায় স্থান পেলেও 'বিষয়' না থাকায় বাদ পড়ে যেতে পারেন। তবে পরীক্ষার আগ পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক অপশন সংশোধনের সুযোগ থাকছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাই প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ছে প্রায় ৩৯ হাজার ভর্তিচ্ছু। এতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক।
কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন একটি পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হতে পারে। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে কেবল মোট জিপিএ ৯ দশমিক ১৫ না থাকায় একই সঙ্গে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যদি গুচ্ছ পদ্ধতি না থাকত তাহলে আমাদের সন্তানরা ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকি ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের মেধাকে অন্তত যাচাই করতে পারত। তারা দাবি করেন, জিপিএ মেধার কোনো মানদণ্ড হতে পারে না। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা যদি শুধু ফরম বিক্রি করে টাকা আয়ের উপলক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয় তবে আমরা তা চাই না। আবেদনকারী সবাইকেই মেধা যাচাইয়ের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
এদিকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে খোলা একটি ফেসবুক গ্রুপে রোববার রাকা মুৎসুদ্দি মিম নামে এক শিক্ষার্থী পোস্ট করেন, 'টাকা ফেরত নয়, পরীক্ষায় বসতে চাই। এভাবে আমাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে না দেওয়ার অনুরোধ রইল।' তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'আমি যেদিন এই কৃষির জন্য আবেদন করতে যাই, আমারই এক সহপাঠী ৪৫০ টাকা কম থাকায় আবেদন করতে পারছিল না। তার আর্থিক অবস্থা ছিল দুর্বল। তাও সে কষ্ট করে অন্য একজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে আবেদন করে। এখন এসব উদ্ভট কর্মকাণ্ডে যদি তার মতো হাজারও ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তাহলে কী করে মানা যায়? অন্তত পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক। মেধার মূল্যায়ন হোক।'
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন 'বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ'-এর চেয়ারম্যান ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার যে কমিটি করে দেয়া হয়েছে তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে পরিষদের কিছু করার নেই। গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্য একটু ব্যাহত হলো কি-না, এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে কামাল উদ্দিন বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের একটি ভয় সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করে। এবার যেহেতু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর নেতৃত্বে আছে তাই তাদের নিয়মটাই হয়তো ফলো করছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সবাইকে সুযোগ দেয়ার পক্ষে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আখতার হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান বলেন, আমরা ছাত্রদের সুবিধা ও পরীক্ষাকেন্দ্রে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরীক্ষা যেহেতু বাকৃবির বাইরে হবে তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা বিবেচনা করে এবারের মতো ১০ গুণ শিক্ষার্থীকে সুযোগ দিয়েছি। প্রাথমিক সিলেকশনে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়া প্রসঙ্গে উপাচার্য জানান, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।