ছাগলনাইয়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে দেড়শ'টির মতো অনুমোদনহীন কিন্ডারগার্টেন। এসব প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্লে গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণি ও তদূর্ধ্ব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের থেকে উচ্চহারে বেতন নির্ধারণ করে তা দিতে বাধ্য করে অভিভাবকদের। একেকটি স্কুলে একেক রকম বেতন আদায় করা হয়।
ছাগলনাইয়া একাডেমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমগীর জানান, তারা প্লে গ্রুপ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি ছাত্র থেকে বেতন নেয় ৫৫০ টাকা। সেশন ফি ১ হাজার টাকা। মাসিক পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা। ভ্যান ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে কোচিং ফিসহ নানা ধরনের ফি। এভাবে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আরও বেশি হারে এসব ফি নিয়ে থাকে। ছাগলনাইয়া বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এসএমডি) সলিম উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, পৌরসভার কলেজ রোডে ইম্পেরিয়াল নামে একটি কেজি স্কুলে তার ৩ ছেলে পড়ে। প্রথম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর সেশন ফি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা।
তিনি এর প্রতিবাদ করলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নুর হোসেন তাকে জানান, সবাই দিচ্ছে, আপনাকেও দিতে হবে। এটির কোনো নিয়ম ও নীতিমালা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি তাকে পরে জানাবেন বলে কেটে পড়েন। সলিম জানান, তিনি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করবেন। ছাগলনাইয়া সদরে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাগলনাইয়া একাডেমি, প্রিক্যাডেট, কোয়ালিটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, আল-ফালাহ কিন্ডারগার্টেন, জাহানারা ট্রাস্ট কিন্ডারগার্টেন, ইম্পেরিয়াল কেজি স্কুল, উদয়ন কিন্ডারগার্টেন, রয়েল একাডেমি, মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাঁশপাড়া আইডিয়াল কেজি স্কুল, মির্জার বাজার প্রিক্যাডেট, রেজুমিয়া কিন্ডারগার্টেন, ওয়াইজ টাচ মাল্টিমিডিয়া, রাধানগর ইউনিয়নে সাউথ টাউন কিন্ডারগার্টেন, সেন্ট্রাল একাডেমি, শুভপুর ইউনিয়নে মুহুরি চাইল্ড কেয়ার একাডেমি, হাজী করিম উল্যাহ একাডেমি, শুভপুর কিন্ডারগার্টেন, পাঠাননগরে খায়েজ আহম্মদ কিন্ডারগার্টেন, ফাতেমা ফারজানা কিন্ডারগার্টেন, পূর্ব পাঠানগড় আইডিয়াল একাডেমি, পূর্ব শিলুয়া প্রিক্যাডেট একাডেমি, ঘোপাল ইউনিয়নে মুহুরি আইডিয়াল একাডেমি, নিজকুঞ্জরা আদর্শ একাডেমি, মহামায়া ইউনিয়নে তৌহিদ একাডেমি, শাহেদা নেওয়াজ কিন্ডারগার্টেন, জয়নগর ইসলামী শিশু একাডেমি, আল-মদিনা ইসলামী একাডেমি, দারুল ইহসান আইডিয়াল একাডেমি, রৌশনাবাদ একাডেমি প্রভৃতি।
এ ছাড়া রয়েছে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শত শত কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসা। এগুলোর মধ্যে খাদিজাতুল কুবরা, আয়েশা (রা.), খোলাফায়ে রাশেদিন মহিলা মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আল-মমিন জানান, নীতিমালায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলও পড়ে না। সবগুলো প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বাণিজ্য করতে কিন্ডারগার্টেন ও বিদ্যালয় পরিচালনা করছে।
ছাগলনাইয়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, তাদের কাছ থেকে ৩৯টি কিন্ডারগার্টেন সরকারি বই নিয়ে থাকে। এই বই তারা কীভাবে নেয় জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী বই থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় সে আলোকে তারা বই পেয়ে থাকে। ২০১৯ সালে আরও কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠান বই নিতে এলে তারা বই দেননি বলে জানান। অনুমোদনহীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বই নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তাদের কোনো নীতিমালা ও সরকারি নিবন্ধন নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী জানান, অনুমোদনহীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।