ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আবারো জামিন আবেদন করেছেন হাইকোর্টে। চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে এই জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা কাওছার।
রানা কাওছার বলেন, অবকাশকালীন বেঞ্চে শুনানি করতে না পারলে নিয়মিত বেঞ্চে জামিনের আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম খুবই অসুস্থ। তাই তার জামিনের আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে গত ৯ জুলাই মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন হাইকোর্ট। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল জামিনের আবেদন খারিজ করায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গত ১৬ জুন হাইকোর্টে হাজির হন মোয়াজ্জেম হোসেন। এরপর তার আগাম জামিনের আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের ওপর শুনানির অনুমতি চেয়ে আবেদন জানানো হয় বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে।
আদালত পরদিন শুনানির জন্য রাখার আদেশ দেন। এরপর ওইদিন হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। পরদিন ১৭ জুন তাকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তার জামিনের আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি। সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তাঁর মা থানায় অভিযোগ দাখিল করেন ২৭ মার্চ। এরপর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাতকে থানায় ডেকে নিয়ে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল নুসরাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। ওই ঘটনায় করা মামলায় তদন্ত শেষে ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২৯ মে ফেনীর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পরই নুসরাতের জবানবন্দির (ওসির কাছে দেয়া) বিষয়টি সবার সামনে আসে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করেন। ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ নম্বর ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ২৭ মে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর পলাতক অবস্থায় আগাম জামিনের জন্য গত ২৯ মে হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ওই জামিন আবেদনের ওপর আর শুনানি করেননি আইনজীবী। এরপর নিয়মিত বেঞ্চে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু শুনানির আগেই ১৬ জুন তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।