কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ রুটে যুগ্ম সচিবের জন্য বিলম্বে ফেরি ছাড়ায় স্কুলছাত্র তিতাসের মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটি। তবে শুরুতেই এই তদন্ত কমিটির প্রতি আস্থা নেই বলে জানিয়েছে তিতাসের পরিবার। এই কমিটির তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসা নিয়ে সংশয়ে সাধারণ মানুষও।
এদিকে এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। রিট আবেদনে সংশ্লিষ্ট ফেরি ম্যানেজারসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল হক পাটোয়ারীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গতকাল সকালে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তদন্তের অংশ হিসেবে তারা গত বৃহস্পতিবার ঘটনার রাতে ঘাটে কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলে এবং ঘাট এলাকা ঘুরে দেখে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল হক পাটোয়ারী বলেন, ‘তদন্তের শুরুতেই আমরা ঘটনাস্থল ও সে রাতে ঘাটে কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও কথা বলব। আমরা ঘটনার মূল কারণ বের করব।’
এদিকে তিতাসের পরিবার এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিরপেক্ষ হবে না উল্লেখ করে আগেভাগেই নাকচ করে দিয়েছে। জনমনেও এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংশয়ের কারণ হিসেবে তারা বলছে, জেলা প্রশাসকের নির্দেশেই ফেরিটি যুগ্ম সচিবের জন্য অপেক্ষায় থেকেছে। তাই তাঁরই অধীনদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিরপেক্ষ হবে না।
তিতাসের মামা অশোক ঘোষ বলেন, ‘জেলা প্রশাসক নিজেই এ ঘটনার জন্য দায়ী। তাঁর দ্বারা গঠিত কমিটি কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ওই কমিটির তদন্ত শুরুর আগেই তা নাকচ করছি। এটি মূল ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করবে।’
আবু জাফর নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি হওয়াটা আশাব্যঞ্জক। তবে এ ঘটনায় যেহেতু জেলা প্রশাসকের নামটি বারবার আসছে তাই তাঁর অধীন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটির তদন্ত নিয়ে সংশয় থাকাটাই স্বাভাবিক।’
বিআইডাব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ী ঘাট ম্যানেজার আবদুস সালাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার সেদিন তাঁর কার্যালয়ে এক সভায় যুগ্ম সচিব স্যারের কথা আমাকে জানিয়ে তাঁর নম্বর দেন। যুগ্ম সচিবকে পারাপার করার জন্য ঘাটে কোনো ফেরি রাখা ছিল না। তাঁকে বহনকারী গাড়িটি ঘাটের কাছাকাছি চলে আসার ফোন পেয়ে তাঁর জন্য কুমিল্লা ফেরিটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেছিল বলে জানতে পেরেছি।’
জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সালাম সাহেবকে যুগ্ম সচিবের বিষয়ে জানিয়েছি। ফেরিতে অ্যাম্বুল্যান্স না তুলে সচিবের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি সম্পূর্ণ ঘাট কর্তৃপক্ষের বিষয়। অ্যাম্বুল্যান্স বসিয়ে রেখে সচিব মহোদয়কে নিতে হবে—এমন কোনো কথা আমি বলিনি।’
তিন তদন্ত কমিটি : ফেরি বিলম্বের কারণে তিতাসের মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তে গত সোমবার তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। বিআইডাব্লিউটিসির জেনারেল ম্যানেজার মো. আশিকুজ্জামানের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ওই দিন দুপুরেই সংশ্লিষ্ট নৌ রুট পরিদর্শন করে। এ ছাড়া মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল হক পাটোয়ারীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, এএসপি সার্কেল আবির হোসেন ও বিআইডাব্লিউটিসির এজিএম (মেরিন) এ কে এম শাজাহান। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুগ্ম সচিব শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান ও উপসচিব শাহ হাবিবুর রহমান হাকিমের সমন্বয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি কমিটি হয়েছে। এই কমিটির আজ তদন্তে নামার কথা রয়েছে।
ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট : এদিকে কাঁঠালবাড়ী এক নম্বর ফেরিঘাটে একজন ভিআইপির (যুগ্ম সচিব) অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি আটকে রাখার কারণে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর অভিযোগ এনে তার পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
রিট আবেদনে সংশ্লিষ্ট ফেরি ম্যানেজারসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন দাখিল করেন।