ঘুষ নিয়ে শত শত স্কুল-কলেজ অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এই অপকর্মটি চলেছে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো অনলাইনে কলেজে ভর্তি চালু করতে গিয়ে ধরা পড়ে এসব অপকর্ম। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করেন তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো: নজরুল ইসলাম খান। দুদুকও অনুসন্ধান শুরু করে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই স্কুল-কলেজ অনুমোদন দেয়া বোর্ড। ঘুষ নিয়ে অনুমোদন ও অনুমোদন নবায়ন করানো সেই কর্মকর্তাদর কেউ এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে, কেউ পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে, কেউ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জমিলা আইনুল আনন্দ বিদ্যালয় ও কলেজ। গত বছর মাত্র দুজন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এ কলেজ থেকে। কিন্তু কেউই পাস করতে পারেননি। উত্তরায় টাচস্টোন কলেজ থেকে মাত্র একজন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনিও পাস করতে পারেননি। এইচএসসি পরীক্ষা ২০১৯ এ কোনো শিক্ষার্থী পাস না করা কলেজগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা।
পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি প্রাপ্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে একাদশ শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি এমন ৩০টি কলেজ চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে শিক্ষা বোর্ড।
ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি না হওয়া কলেজগুলোর পাঠদানের অনুমতি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়েও নোটিশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত এ নোটিশ প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, শতভাগ ফেল করা এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে গাজীপুরে পূবাইল কমার্স কলেজ, গাজীপুর মডেল কলেজ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে মেদিনিমন্ডল গার্লস কলেজ, মানিকগঞ্জের ঘিওরে আব্দুর রহিম খান মহিলা কলেজ, বলিয়াতি কলেজ, টাঙ্গাইলের নগরবাড়ীতে বারিগ্রাম হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভূঞাপুরে আলোয়া হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টাঙ্গাইলে আদর্শ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ময়মনসিংহের ভালুকায় শহীদ স্মৃতি বিএম কলেজ, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আবুল কাশেম কলেজ, নেত্রকোনার পূর্বধলায় জটিয়াবর কলেজ, মদনে বালালি বাগমারা শাহজাহান কলেজ, শেরপুর ঝিনাইগাতিতে বিষ্ণুপুর খন্দকারবাড়ি কলেজ।
দেখা গেছে, এসব কলেজে ধারাবাহিকভাবেই ফলাফল খারাপ করেছে। কোনো কোনো কলেজ থেকে টানা দুই বছর এবং কোনো কোনো কলেজ টানা তিনবছরেও কেউ এইচএসসিতে পাস করতে পারেননি। এছাড়া একাদশ শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি এমন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ৩০টি কলেজকেও দেয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। এ তালিকায় রয়েছে মোহাম্মদপুরে লাইসিয়াম কলেজ, নিউমার্কেট এলাকায় ওয়েস্টার্ন কলেজ, তেজগাঁওয়ে সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সবুজবাগে সেন্ট্রাল আইডিয়াল কলেজ, খিলগাঁওয়ে বাংলাদেশ কমার্স কলেজ, উত্তরায় ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস কলেজ, সিএসডি কলেজ, হলি চাইল্ড কলেজ, ধানমন্ডিতে ঢাকা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চার্টার্ড কলেজ, মিরপুরে প্রাইম সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজসহ আরও বেশ কয়েকটি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছাত্র ছাত্রীরা একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল, শিক্ষকদের পাঠদানের সক্ষমতা ইত্যাদি যাচাই করে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগ্রহ দেখায় না তারা। এ ছাড়া কোনো কোনো কলেজে বছরের পর বছর কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারছেন না। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। ফলাফল সন্তোষজনক না হলে তাদের পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে।
তথ্য মতে, সারা দেশে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ৪১টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৫৫টি কলেজের সব শিক্ষার্থী ফেল করেছিলেন।