টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গেড়ামারা সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণের সময় নজরে আসে সে জেএসসিতে ফেল করেছে। তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে। সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এ ঘটনার সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শিক্ষক অভিভাবকদের প্রশ্ন ফেল করা শিক্ষার্থী কিভাবে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলো। কিভাবেই বা সম্পন্ন হলো তার রেজিস্ট্রেশন। আর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। শিক্ষাবিদরা চান প্রধান শিক্ষকের এমপিও বন্ধ করা হোক।
জানা গেছে, গেড়ামারা সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ফারজানা আক্তার নামে এক ছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এসএসসির ফরম পূরণ করতে গিয়ে জানা যায় সে জেএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে। তাই ৪ হাজার ২৫০ টাকা জমা দেয়ার পরেও হয়নি তার ফরমপূরণ। যদিও ফারজানা থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। সে প্রেক্ষিত নবম শ্রেণিতে হয়েছে তার রেজিস্ট্রেশনও। ফরজানা উপজেলার চান্দুলিয়া গ্রামের ফজলুর রহমানের মেয়ে। গত ২১ নভেম্বর শিক্ষার্থী ফরজানা তার ফরমপূরণ না হওয়ার বিষয়ে বিচার চেয়ে মির্জপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাছাড়া, বিষয়টি মির্জাপুরের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকেও জানানো হয়েছে বলা জানা গেছে।
জানা যায়, ফারজানা আক্তার ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে গেড়ামারা সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ফল প্রকাশের পর ফারজানা ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নবম শ্রেণিতে তাকে নিবন্ধন করায় এবং বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। দশম শ্রেণিতে তার ক্লাস রোল ৩০।
গত ১৫ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হলে তাকে ১৪ অক্টোবর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত প্রবেশপত্র দেয়া হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় ফারজানা সব বিষয়ে উত্তীর্ণও হয়। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হলে তার কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ ৪ হাজার ২৫০ টাকা নেয়া হয়। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষায় সে ফেল করেছে একথা বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দু’দিন পরে তাকে টাকা ফেরত দেয়। এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন ফারজানা যদি জেএসসি পরিক্ষায় ফেল করেও থাকে তাহলে কীভাবে তাকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হলো। এই ভুলের খেসারত কে দেবে?
ফারজানার বাবা ফজলু মিয়া জানান, চার মেয়ে ও ছেলে সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ফারজানা। দিনমজুরের কাজ করে মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। দুই বছরে তার মেয়ের লেখাপড়া বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। টাকা, বড় বিষয় না হলেও মেয়ের জীবন থেকে তিনটি বছর এভাবে হারিয়ে গেল এ দায় কে নেবে?
আরও পড়ুন: এসএসসির ফরম পূরণের সময় জানল জেএসসিতে ফেল!
এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমের নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক এবং চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী বলেন, একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব অনেক। তার দায়িত্বের ওপর কয়েকশ, ক্ষেত্র বিশেষে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও শিক্ষকদের কর্মজীবন নির্ভর করে। তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নেই। আর ফেল করা শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা, তাকে রেজিস্ট্রেশন করা, নবম দশম ম্রেণিতে পাঠদান, ফরম পূরণের টাকা নেয়ায় এ প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। তার এমপিও বাতিল করা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ দেয়া হয় কমিটির মাধ্যমে। এর ফলে অযোগ্য লোক দায়িত্বপূণ পদে বসছেন। আমি মনে করি এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ শুরু হলে এ রকম দায়িত্বহীন লোক হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
এদিকে জেএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি, তার রেজিস্ট্রেশন এমনকি ফরম পূরণের টাকা নেয়ার দায়ে গেড়ামারা সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। মো. মোজাম্মেল হকের এমপিও বন্ধ হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রধান শিক্ষকের কাছে জেএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি, তার রেজিস্ট্রেশন এমনকি ফরম পূরণের টাকা নেয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মোজম্মেল হককে শোকজ করবে শিক্ষা অধিদপ্তর। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ফেল করা শিক্ষার্থীকে কিভাবে ভর্তি করালো বা কেন তার রেজিস্ট্রেশন হল সে বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে শোকজ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক এমপিওভুক্ত শিক্ষক বলে জানা গেছে। ফেল করা শিক্ষার্থীকে ভর্তির বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তার এমপিও স্থগিত বা বন্ধ করা হবে। এসময় দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হককে শোকজ করতে একজন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ফারজানা নামে দশম শ্রেণিতে কামারপাড়া গ্রামের এক ছাত্রী ফরম পূরণ করেছে। তবে ফেল করা শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তারের (রোল ৩০) নিবন্ধন ও তাকে নবম-দশম শ্রেণিতে ভর্তি, তার থেকে বেতন, পরীক্ষার ফিস, মিলাদ ও পূজার চাঁদা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি।