ফেল করেও চতুর্থ বর্ষে পদোন্নতি পেলেন ডাকসুর এজিএস - দৈনিকশিক্ষা

ফেল করেও চতুর্থ বর্ষে পদোন্নতি পেলেন ডাকসুর এজিএস

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগে টানা সাত বছর ধরে পড়ছেন সাদ্দাম হোসেন। উত্তীর্ণ হতে পারেননি তৃতীয় বর্ষের সমপনী পরীক্ষায়। ফলাফলের খাতায়ও আসেনি তাঁর নাম। তবু চতুর্থ বর্ষে পড়ার পদোন্নতি পেয়েছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন। অংশগ্রহণেরও সুযোগ পেয়েছেন চতুর্থ বর্ষের প্রথম পর্বের পরীক্ষায়।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাইমা হক বলেন, মানবিক বিবেচনায় তাঁকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বলেছেন, আইনে অনেক কিছু আছে, যা বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, সাধারণত কোনো শিক্ষার্থী সেমিস্টার বা বার্ষিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে ফলাফলের খাতায় নাম আসে না। তবে যারা একটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হন তাদের নাম ফলাফলের তালিকায় থাকে। এবং তারা পরবর্তী সেমিস্টার বা বর্ষে ভর্তি হতে পারেন। তবে ফলাফলের তালিকায় যাদের নাম আসে না তাদের আগের সেমিস্টার বা বর্ষে পুনরায় পড়াশোনা করে উত্তীর্ণ হতে হয়।

এদিকে সাদ্দাম কয়েকটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হওয়ায় ফলাফলের খাতায় তাঁর নাম না এলেও তিনি পরবর্তী বর্ষে পদোন্নতি পেয়েছেন বলে জানা যায়। তবে কয়েকটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তী বর্ষে পদোন্নতি পাওয়ার নজির নেই আইন বিভাগে। সাদ্দামের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতি পাওয়ার পর চতুর্থ বর্ষের প্রথম পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে দুটি পরীক্ষা শেষও হয়েছে। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া জন্য তাঁর ক্লাসে উপস্থিতি রয়েছে ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যদিও কারো ২০ শতাংশ উপস্থিতি থাকার শর্তে এর আগে কাউকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। তাই এবার নিয়ম করা হয়েছে, যাদের ২০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি আছে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। এর কম উপস্থিতি আছে এমন অনেকের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একমাত্র সাদ্দামের জন্যই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।

এদিকে চতুর্থ বর্ষের পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল (৪০৪) কোর্সেও ১৮টি ক্লাসের মধ্যে তাঁর উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ১২টি। যদিও চতুর্থ বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সাদ্দাম কোনো কোর্সেই নিয়মিত ক্লাস করেন না। তাঁকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্যই তাঁর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

জানা যায়, গত ২৭ মে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, ১২৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ১২১ জন পরীক্ষায় পাস করেন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অনুত্তীর্ণ তিনজনের একজন হলেন সাদ্দাম হোসেন।

যদিও তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সময় সাদ্দামের উপস্থিতি ছিল ৩০ শতাংশ। এজন্য বিভাগ থেকে নিয়ম করা হয় যে, যাদের ৩০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি আছে, তারাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এর কম উপস্থিতি যাদের তারা তখন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি।

ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২০১১-১২ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষ পার হতে তিনি তিন বছর সময় নেন। ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন। চতুর্থবারের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে তিনি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এরপর ২০১৬ সালের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা পাস করতে পারেননি সাদ্দাম হোসেন। ২০১৭ সালের ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৮ সালে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেন। সেই তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি শুরু হয়। সেই পরীক্ষায়ও অকৃতকার্য হয়েছেন সাদ্দাম। সর্বোপরি এই ছাত্রনেতা গত সাত বছরে পাঁচবার ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করেন।

আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, মানবিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের এমন সুযোগ দেওয়া হয়। তাঁর ক্ষেত্রেও তেমন সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগ দেওয়া না হলে অনেকেই শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে। সব জায়গায় আইনের প্রয়োগ ঘটানো যায় না। আইনে এমন অনেক কিছুই আছে, যা বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করলে তার প্রয়োগ সম্ভব হয় না।

সাদ্দামের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে রহমত উল্লাহ বলেন, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই কোনো বিভাগে ফল প্রকাশিত হয় না। ফল প্রকাশের আগেই কেউ পরবর্তী বর্ষে ক্লাস শুরু করতে পারে। তার ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে যে, ফল প্রকাশের আগে পরবর্তী বর্ষে ক্লাস শুরু করেছেন। সেজন্যই তাঁর উপস্থিতি এসেছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সেসব অভিযোগ স্বাভাবিকের চেয়ে ব্যতিক্রম সেগুলো ডিন কমিটিতে আসে। তারাই হয়তো এটা করে থাকেন। কমিটি তাঁকে (সাদ্দাম) হয়তো জরিমানার মাধ্যমে ইমপ্রুভের বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064730644226074