ফেসবুক মেসেঞ্জারে হেনস্তার শিকার ইবি ছাত্রীরা - দৈনিকশিক্ষা

ফেসবুক মেসেঞ্জারে হেনস্তার শিকার ইবি ছাত্রীরা

ইবি প্রতিনিধি |

প্রথমে আলাপ, এর পর বন্ধুত্ব। তারপর প্রেমের প্রস্তাব। রাজি না হলে হুমকিধমকি। অকথ্য গালিগালাজও শুনতে হয় মেয়েদের। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক। পুরোটাই হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে। এমন ঘটনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে রফিকুল ইসলাম নামে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃৃতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের এক ছাত্র তাকে পাঁচ মাস ধরে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে বিরক্ত করতেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। পরে সে আমাকে ইগনোর করতে থাকে। অনেক অপমানও করে। আমি রাগের মাথায় কিছু কথা বলেছি। এটা আমার ভুল ছিল।'

গত ২৫ জুন এমন আরও একটি ঘটনা সামনে আসে। ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে মেসেঞ্জারে বার্তায় গালাগাল দেওয়া হয় রিজভি কবির নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে। ওই আইডি একই বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র এনামুল কবিরের। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী তার ফেসবুক টাইমলাইনে প্রতিবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। একই সময়ে সামনে আসে আরও কয়েকটি ঘটনা। লোকপ্রশাসন, বাংলাসহ বিভিন্ন বিভাগের বেশ কয়েকজন ছাত্রী অনলাইনে এই রিজভির হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ফেসবুকে মেয়েদের স্ট্যাটাসে বাজে মন্তব্য, মেসেঞ্জারে গালিগালাজ, ছাত্রলীগ নেতাদের পরিচয়ে ভয় দেখানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এনামুলের হেনস্তার শিকার ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, 'যে কোনো জায়গায় যে কোনো অবস্থায় উনি মেয়েদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। আমার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে দুইবার। তার ভাষা খুব খারাপ।' এ বিষয়ে এনামুল কবির বলেন, 'সব দোষ আমার না। এমন তিনটি ঘটনার জন্য বিভাগের শিক্ষকদের কাছে আমি লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছি। এর পর থেকে গত তিন মাসে ক্যাম্পাসের কারও সঙ্গে কিছু করিনি।'

এর আগে ইবির আইন বিভাগের কামরুজ্জামান সাগর নামে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মেসেঞ্জারে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নজরে এলে সাগরের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে ইবি প্রশাসন।

হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও আড়ালে থেকে যায় এমন শত ঘটনা। মেসেঞ্জারে বার্তা দিয়ে ছাত্রীদের গভীর রাতে বিরক্ত করার অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও। ভুক্তভোগীরা আত্মসম্মানের ভয়ে চেপে রাখেন এমন মানসিক নির্যাতনের কথা। একই অপরাধে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। এক সামাজিক সংগঠনের সভাপতির হেনস্তার শিকার আইন বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, 'এসব ঝামেলায় জড়াতে চাই না। পরিচয় প্রকাশ পেলে সমস্যা হতে পারে।'

এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন-২০০৬ অনুযায়ী সাইবার অপরাধ বলে গণ্য। এ আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোনো মিথ্যা বা অশ্নীল কিছু প্রকাশ, সম্প্রচার করে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলে এগুলো হবে অপরাধ। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।'

এ ধরনের ঘটনাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেছেন আইনবিদ অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল। তিনি বলেন, 'কোনো নারীর সঙ্গে এমন আচরণ বা অঙ্গভঙ্গি করা, যা ওই নারীর আত্মমর্যাদায় আঘাত করে, তা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।'

ঘটনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল। সেলের প্রধান অধ্যাপক নাসিম বানু বলেন, কোনো অবস্থাতেই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা কাম্য নয়। অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত পরিচয় শনাক্ত করে রাখতে হবে। এর পর আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। ক্যাম্পাস খুললে অভিযোগের ভিত্তিতে কমিটি নিয়ে বসে আইনি ব্যবস্থা নেব।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043661594390869