ফোকলোর বিভাগ বিষয়ে ইউজিসি ও পিএসসির সিদ্ধান্ত ও প্রতিক্রিয়া - দৈনিকশিক্ষা

ফোকলোর বিভাগ বিষয়ে ইউজিসি ও পিএসসির সিদ্ধান্ত ও প্রতিক্রিয়া

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ইউজিসি পিএসসিকে ফোকলোর বিষয়ে একটি পৃথক কোড করতে মতামত প্রদান করে বলে যে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের গ্র্যাজুয়েট/পোস্ট গ্র্যাজুয়েটদের বাংলা বিভাগের গ্র্যাজুয়েট/পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হিসেবে বিবেচনা করা হোক। বস্তুতপক্ষে, বিভাগ থেকে একরকম কোনো দাবি করা হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগ হিসেবে সে সমস্ত জায়গায় শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ রয়েছে সেটার ব্যবস্থা করা হোক এবং পিএসসিতে স্বতন্ত্র সাবজেক্ট কোড রাখা হোক যাতে তারা অন্তত দরখাস্ত করতে পারে। ইউজিসির এই সিদ্ধান্ত আমাদের অভিপ্রেত ছিল না বরং তা ছিল বিপরীতধর্মী। বুধবার (৯ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে এই পরিপত্র প্রচারের ফলে রাজশাহী, ঢাকা এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে শুরু করে। অনেক শিক্ষকও সামাজিক মিডিয়াতে মন্তব্য করতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইউজিসিকে আলটিমেটামও দিয়েছে। বাংলা বিভাগের দাবি, ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের পদ দখল করবে। এবং কোনো অবস্থায় বাংলা বিভাগে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীদের চাকরি হতে পারে না। চাকরির এই দুর্মূল্যের বাজারে তাদের এই দাবি যৌক্তিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সমস্যার গভীরে কতগুলো বিষয় রয়েছে। প্রথমত, ফোকলোর একটি স্বতন্ত্র ডিসিপ্লিন এবং বাংলার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বললেই চলে। ফোকলোর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটি বিষয় হিসেবে বাংলাদেশের জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস, সংস্কৃতি, আবহমান জীবনধারা, পুরাতত্ত্ব, লোকজ সংস্কৃতি, লোকশিল্প, সংগীত, ধর্ম, নৃত্য, ক্রীড়া এবং আধুনিক জীবনধারার সঙ্গে সংযুক্ত নানা জীবনাচরণ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সারা বিশ্বের কারিকুলামের নির্যাস নিয়ে এবং বাংলাদেশের লোকজ জীবনধারার সমন্বয়ে সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে আধুনিক পঠনপাঠন ও গবেষণার লক্ষ্যে এ বিভাগ কাজ করছে। বর্তমানে বাংলা বিভাগের সঙ্গে আমাদের পঠনপাঠনগত মিল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমনকি আমরা যে লোকসাহিত্য বা মৌখিক সাহিত্য পড়ি তারও উদ্দেশ্য বাংলা বিভাগের সঙ্গে মেলে না। কাজেই আমরা কোনোভাবেই বাংলা বিভাগের গ্র্যাজুয়েট বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি না।

দ্বিতীয়ত, বিদ্যায়তনিক চর্চার সঙ্গে চাকরিকে সংশ্লিষ্ট করা বর্তমানে একটি আবশ্যিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে যদিও সত্যিকার বিদ্যার্জনের উদ্দেশ্য শুধু চাকরির পাওয়া হতে পারে না। তবু বাংলাদেশে এই বিভাগের যাত্রা শুরুর পরে শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করে বিভাগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। কারণ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে এ কাজটি সত্যি কঠিন। ষাটের দশকের বাংলা একাডেমিতে ফোকলোর বিভাগ চালু হয়েছিল গবেষণা শাখা হিসেবে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এই বিষয়ে উচ্চতর লেখাপড়া করেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে অনেক উচ্চবিলাসী প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এর পঠনপাঠন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে, নানাভাবে এর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়; বলতে দ্বিধা নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পণ্ডিতবর্গ সদর্থক ভূমিকার পরিবর্তে ঋণাত্মক ভূমিকা পালন করেন। কিছু ছদ্ম ফোকলোরিস্ট ব্যক্তিগত উন্নতির উপায় হিসেবে একে ব্যবহার করেন। ফলে কিছু অসার প্রকল্প ও কার্যক্রম লক্ষ করা যায়। ফলত একাডেমিক পঠনপাঠনকে সহায়তা করার কোনো সত্ উদ্যোগ গৃহিত হয়নি কখনো। ফলে এই বিষয়েসমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভালো কিছু এর ভাগ্যে জোটেনি।

ইউজিসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি আমাদের জন্য ছোটো হলেও একটি সাফল্য। ইউজিসিকে ধন্যবাদ। এই কাজে যেসব বিশেষজ্ঞরা নিয়োজিত ছিলেন তারা হয়তো এই মনে করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে যেহেতু কলেজ বা স্কুলে ফোকলোর বিভাগ নেই কাজেই আপাতত তারা বাংলা বিভাগে ফোকলোর পড়াতে পারে। বাংলা বিভাগে ফোকলোর সামান্য পড়ানো হয়। আর স্কুলে বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতি বা বাংলাদেশ ‘অধ্যয়ন’ তারা পড়াতে পারে। তবে আগেই বলেছি এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছিল না। সফলতা এই জন্য যে, অন্তত এই সুযোগে বিদ্বত্ মহলে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং যেসব ব্যক্তির এ বিষয়ে কিছু করণীয় আছে, তারা সদয় হলে কিছু করতে পারেন। আমরা ফোকলোরের জন্য স্বতন্ত্র কোড চেয়েছি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগ হিসেবে, কোনো বিষয়ের সঙ্গে অন্বিত হয়ে নয়। ইউজিসি পিএসসিকে ফোকলোরকে যে স্বতন্ত্র বিষয় কোড দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করা হোক এবং আপাতত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বড়ো বড়ো কলেজগুলোতে ফোকলোর বিভাগ খোলা হোক আমরা সেই দাবি জানাই। তাহলে ইউজিসি ও পিএসসির উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যাবে এবং চলমান সংকট সমাধান হবে ।

মোস্তফা তারিকুল আহসান : প্রফেসর, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036978721618652