১৯৭৬ সাল। ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ লিখিত শিশু সংগঠন খেলাঘরের ২৫ বছরের ইতিহাস ‘এগিয়ে চলার বছর পঁচিশ’ প্রকাশ করেছি। আমি তখনো আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা শুরু করিনি। ১৯৭৮ সালে যৌথ মালিকানায় আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা শুরু করি। ‘মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তচেতনা, দুয়ের প্রত্যয়ে আমাদের প্রকাশনা’—এই অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৮৬ সালে ব্যক্তিমালিকানায় শুরু আগামী প্রকাশনীর। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর মধ্যে আমরা প্রকাশ করেছি অনেকের প্রথম বই। প্রকাশ করেছি সাধারণ গৃহিণী থেকে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বই। লেখক তালিকা দেখলে তার যথার্থতা মিলবে। তাঁদের অনেকে বিখ্যাতও হয়েছেন। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের বিকাশে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ব্যবস্থাপনায় দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার মেলার বিন্যাস আরো নান্দনিক হয়েছে। এনামুল করীম নির্ঝরের নেতৃত্বে কয়েকজন আর্কিটেক্ট মেলার এই কাঠামোবিন্যাসের কাজ করেছেন। অতিরিক্ত পাওনা, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী নিজেও একজন আর্কিটেক্ট। আর অভিজ্ঞ এবং পরিশ্রমী বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমদের দক্ষতাও যুক্ত হয়েছে এর সঙ্গে।
তবে অপ্রয়োজনে মেলার এই পরিসর বাড়ানোর সুযোগে মৌসুমী ভুঁইফোড়/অপ্রকাশকদের ভিড়ে পেশাদার প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যা প্রকাশনাশিল্পের জন্য এক ধরনের হুমকি। যেহেতু বইমেলা, বইয়ের আলোচনা আরো বাড়ানো দরকার। ভবিষ্যতে কমপক্ষে দুটি প্যাভিলিয়ন করে, সেখানে শুধু বই আলোচনা, লেখক প্রমোশন, মোড়ক উন্মোচন ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সর্বাধিক গ্রন্থের প্রকাশক আগামী প্রকাশনী। মুজিব শতবর্ষে আমরা অর্ধশতাধিক বই প্রকাশ করছি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসনাত আবদুল হাই, মোনায়েম সরকার, ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, আসাদ মান্নান, সিরাজুল ইসলাম মনির ও সৈয়দ জাহিদ হাসানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু : শতবর্ষে শতপ্রবন্ধ’, ‘বঙ্গবন্ধু : শতবর্ষে শতগল্প’, ‘বঙ্গবন্ধু : শতবর্ষে শতকবিতা’, ‘বঙ্গবন্ধু : শতবর্ষে শতভাষণ’, ‘পঁচাত্তর ট্র্যাজেডি : রক্তরঞ্জিত শতপ্রবন্ধ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু : নির্বাচিত কিশোরগল্প’।
এ ছাড়া রফিকুল ইসলামের ‘মুক্তিযুদ্ধ-সমগ্র’, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘গান্ধীর দর্শন ও শেখ মুজিবের রাজনীতি’, ‘বঙ্গবন্ধু : মধ্যরাতের সূর্যতাপস’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা’, সেলিনা হোসেনের ‘স্মরণে শেখ মুজিব’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমগ্র’, পান্না কায়সারের ‘মুক্তিযুদ্ধ-সমগ্র’, ড. মোহাম্মদ হাননানের ‘শতাব্দীর বঙ্গবন্ধু’, ড. আনু মাহ্মুদের ‘বঙ্গবন্ধুর সমাজ-ভাবনা’, মঈনুল আহসান সাবেরের ‘মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমগ্র’, ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামের ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি’, ড. ডি এম ফিরোজ শাহের ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন’, সৈয়দ জাহিদ হাসানের ‘শেখ মুজিবের প্রবচন’ ইত্যাদি।
মুজিব শতবর্ষে সরকারের ব্যাপক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বই কেনার জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ করার দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের বই কেনার বাজেট ১০ গুণ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। আর শিক্ষিত জাতি গঠনে পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি।
লেখক : ওসমান গনি, প্রকাশক।