বই পড়ার জন্য ঢাকা মহানগরের ৯৬ স্কুলের ৫ হাজার ৮৭২ শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। রাজধানীর নটর ডেম কলেজে শুক্রবার শিক্ষার্থীদের একাংশের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। সারা দেশে গেল বছর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উৎকর্ষ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের বই পড়া নিয়ে দু’দিনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হয় এদিন সকালে। অতিথিদের নিয়ে নানা রঙের বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
অনুষ্ঠানে ছিলেন শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশর প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, গ্রামীণফোনের হেড অব সাসটেইনিবিলিটি রাসনা হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন।
তিন পর্বে ৫ হাজার ৮৭২ শিক্ষার্থীকে স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরা পাঠক পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার প্রথম পর্বে ৩৪ স্কুলের ১ হাজার ৯৫২ শিক্ষার্থীকে ও দ্বিতীয় পর্বে ৬৮টি স্কুলের ৩ হাজার ৮৭৪ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়। ৩৩ শিক্ষার্থী ও ৪ অভিভাবককে ২০০০ টাকা সমমূল্যের বই বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়। আজ বিকালে তৃতীয় পর্বে ২৮ স্কুলের ১ হাজার ৯৯৮ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেয়া হবে।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পৃথিবীতে দু’ধরনের মহৎ মানুষ আছে। এক ধরনের মানুষ বই পড়ে জাতিকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছেন। আরেক ধরনের মানুষ বই না পড়েও জাতিকে শিক্ষিত বা সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। এ দু’ধরনের মানুষেরই উদ্দেশ্য একই রকমের- মানুষের কল্যাণে কাজ করা। তাই তোমরা বিখ্যাত মনীষীদের বইগুলো পড়ার মাধ্যমে দেশের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করবে, যাতে আগামী দিনে আমরা একটা সমৃদ্ধ আলোকিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি বলেন, আশা করছি আগামী বছর ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীকে আমরা বই পড়া কার্যক্রমের আওতায় আনতে পারব। কারণ এখন অভিভাবকদের মধ্যেও এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগে তারা ভাবত, সন্তান আউট বই পড়লে তাদের একাডেমিক ফল খারাপ হবে। এখন তারা দেখছে, যারা একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে অন্য বই পড়ে, তারা এগিয়ে থাকে। তারা অন্যদের চেয়ে পরীক্ষার খাতায় ভালো লিখে।
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা যখন বই পড়বে, তখন ভাববে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের সঙ্গে কথা বলছ। এমনটা বই পড়ার মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ বই পড়ার প্রবণতা কমে গেছে। ফেসবুক ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার মাদকের মতো। মাদক গ্রহণে মস্তিষ্কের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ফেসবুক ব্যবহারেও মস্তিষ্কের বিরাট ক্ষতি হয়। এজন্য তোমরা যারা ফেসবুক ব্যবহার কর, তারা ফেসবুক ছেড়ে বই পড়ায় মনোযোগী হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, এখনকার সময়ে দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে মানুষ হওয়া। আর এ মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের প্রচুর বই পড়া প্রয়োজন। তাই তোমরা বিশ্বসাহিত্যের সেরা বইগুলো পড়ে মানুষের মতো মানুষ হবে। আনিসুল হক ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তোমাদের প্রচুর বই পড়তে হবে, সেই বই থেকে আহরিত জ্ঞানকে বাস্তবে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বইয়ের জ্ঞানকে বাস্তবে কাজে লাগাতে হবে।
রাসনা হাসান বলেন, বেশি বেশি বই পড়তে হবে। আর সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারলে সফলতা নিশ্চিত। আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা বই পড়ার মাধ্যমে নিজেদের শানিত করে আগামী দিনের আলোকিত দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দেবে।
আয়োজকরা জানান, একটি ই-লাইব্রেরি তৈরি করেছে গ্রামীণফোন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যৌথ উদ্যোগে। আগ্রহী পাঠক পছন্দের বই পড়তে পারবেন ই-লাইব্রেরিতে।