মফস্বল এলাকায় বই মেলা! ভাবতেই অবাক লাগে। এতোদিন শুনে এসেছি বড় বড় শহরে বই মেলা। কিন্তু হঠাৎ মফস্বল এলাকায় বই মেলা। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী একটি মফস্বল এলাকা। যেহেতু ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে বহু আলোচিত কয়লাখনি ও পাথরখনিসহ স্বপ্নের স্বপ্নপূরী। বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুলবাড়ীতে অনেকেই আসেন খনিসহ বিভিন্ন নিদর্শন জায়গাগুলো দেখতে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, মফস্বল এলাকাগুলোতে বই উৎসব কিংবা বই মেলা খুব একটা নজরে পড়ে না। বই পড়াকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বই মেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো গত ২০১৯ সালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। প্রথমে অনেকে অবাক হন এই ধরনের বই মেলার কথা শুনে। বই মেলা তাও ফুলবাড়ীর মতো উপজেলায়? বহু প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে চার দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ মেলায় সহযোগিতা দেয় সাস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। এই বই মেলা উদ্বোধনের পর থেকেই বইপিপাসু বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। মেলায় দেশি-বিদেশি লেখকদের দশ হাজার বই ছিল। মফস্বল এলাকায় ১০ হাজার বইয়ের আয়োজন!
আলোর দিশা নিয়ে জীবন আলোকিত করতে সহযোগিতা করে বই। বই আমাদের মাঝে জ্ঞান সৃষ্টি করে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে মানুষ্যত্বের রূপ দেয়, বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের আগ্রহী ও কৌতূহলী করে তোলে, নতুন চিন্তা-চেতনার বীজ বপণ করে আলোর পথ দেখায়। আমাদের সক্ষম ও যোগ্যতর করে তোলে। বই পড়ার মাধ্যমে মেধা ও মনন শাণিত হয়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায় বই। বই আছে বলেই জ্ঞান-বিজ্ঞান এত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। ফেব্রুয়ারির পহেলা তারিখ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আয়োজন করা হয় বই মেলার। পুরো মাসজুড়েই বই পিপাসুদের পদচারণায় মুখোরিত থাকে মেলা চত্বর। এই মেলাকে কেন্দ্র করে লেখক-লেখিকা-পাঠক-প্রকাশনাগণরা অধির আগ্রহে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। বই মেলাগুলোতে মোড়ক উন্মোচন হয় সর্বাধিক সংখ্যক বিভিন্ন লেখক-লেখিকাদের বই।
একটি বই মেলায় পাঠক যেমন তার পছন্দের বইটি খুঁজে নিতে পারেন, ঠিক তেমনি একজন লেখকও তাঁর প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে সরাসরি পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেন। ভাষার মাসে বই মেলার আয়োজন ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি মনে করি, সবার তো সামর্থ্য থাকে না ঢাকা কিংবা বড় বড় শহরে গিয়ে বই মেলা দেখার বা পন্দের বই কেনার। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারিভাবে প্রতিটি মফস্বল এলাকায় এ ধরনের বই মেলার আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে করে মফস্বল এলাকার মানুষের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালোবাসাটা দৃঢ় হবে। লেখকরা আগ্রহ পাবে লেখার। প্রত্যেককে বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে হলে, নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে হলে বই মেলার বিকল্প নেই। আশা করি, প্রতিটি মফস্বল এলাকায় বই মেলার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে। বই মেলা পারে মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গড়ে তুলতে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমাজ থেকে নির্মূল করতে। আলোকিত মানুষ গড়ে সমাজের অপকর্মগুলো নিধন করতে। ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করতে।
লেখক : প্লাবন কুভ, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর।