গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছোট-বড় সবার দোরগোড়ায় বই হাতে পৌঁছে যেতেন পলান সরকার। সেই পলান সরকার আর বই বিলি করবেন না। শুক্রবার (০১ মার্চ) দুপুরে ৯৮ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন)। বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন পলান সরকার।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে হয় তাকে। তবে বইয়ের প্রতি তার প্রেম ছিলো আজীবন। নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার একটি আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পলান সরকার ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক পান। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’তে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয় ‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’ শিরোনামে। এটিই তাঁকে নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদন।
পরে সরকারিভাবে পলান সরকারের বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে বিশ্বের ভিন্ন ভাষার প্রধান প্রধান দৈনিকে একযোগে পলান সরকারের বই পড়ার এই আন্দোলনের গল্প ছাপা হয়। সারা দেশে তাঁকে বহু বার সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটক তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালে সমাজসেবায় অবদানের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘একুশে পদক’ এ ভূষিত হন পলান সরকার। বিনামূল্যে বই বিতরণ করে সকলের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির করার জন্য পলান সরকার ‘সাদা মনের মানুষ’ খেতাবেও ভূষিত হন।
পলান সরকার যতদিন বেঁচেছিলেন ছড়িয়ে দিয়েছেন আলো। আজ সেই আলোর ফেরিওয়ালা চলে গেলেন। আজীবন মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন।
লেখক: প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।