স্কুলে আসা যাওয়ার পথে তিন বখাটের উপদ্রব ও লাঞ্ছনায় বন্ধ হয়ে গেছে এসএসসি পরীক্ষার্থী রিয়া মনির লেখাপড়া। বখাটেদের উৎপাত ও যৌন হয়রানি থেকে বাঁচতে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বদল করেও রক্ষা পায়নি সে। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়িয়া গ্রামের এ ঘটনায় থানায় মামলা করে এখন জীবনশঙ্কায় পড়েছে রিয়া মনির পরিবার।
স্কুলছাত্রীর পিতা রিয়াজ মৃধার অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, রিয়া মনি বকুলবাড়িয়া মাধ্যমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিবেশী আইউব আলী খানের ছেলে সুমন খান, আপ্তের আলী খানের ছেলে বাচ্চু খান এবং আলী খানের ছেলে নজরুল ইসলাম বাবু দীর্ঘদিন ধরে রিয়া মনিকে উত্ত্যক্ত এবং যৌন হয়রানি করে আসছে। উত্ত্যক্ত থেকে রেহাই পেতে রিয়ামনি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বদল করেও রেহাই পায়নি। উত্ত্যক্তকারীরাও নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বদল করে তাদের অপকর্ম চালু রাখে।
এ ঘটনায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার মীমাংসা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। স্কুল থেকে আসা-যাওয়ার পথে যানবাহন থেকে রিয়াকে জোর করে নামিয়ে তাদের গাড়িতে উঠতে প্রতিনিয়ত বাধ্য করত বখাটেরা। বিষয়টি রিয়া পরিবারকে জানালে গত ২৫ জুলাই পাতাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন রিয়ার পিতা।
প্রধান শিক্ষক আবু মোহাম্মদ হানিফ অভিযোগের সত্যতা পেয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়ে আইনি সহায়তা নিতে বলেন রিয়ার বাবাকে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের পরিবারকে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে শান্ত হবার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তিন বখাটের উত্ত্যক্তের মাত্রা থামেনি। গত ৫ আগস্ট বিকালে রিয়া প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে আলীসান মোড়ে রিয়ার ওড়না নিয়ে যায় উত্যক্তকারীরা। এসময় রিয়াকে জোর করে রাস্তার পার্শ্ববর্তী কলাবাগানে টেনে নামিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। তার চিৎকারে প্রতিবেশী মনির খান ও সেলিনা বেগমসহ স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে উত্ত্যক্তকারীরা পালিয়ে যায়।
গত ৬ আগস্ট রিয়ার পরিবার গলাচিপা থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। ৮ আগস্ট রিয়ার বাবা সুমন খান, বাচ্চু খান এবং নজরুল ইসলাম বাবুকে আসামি করে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত গলাচিপা থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ার আদেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে পুলিশ অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নেয়।
থানায় মামলা করায় আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে রিয়ার ছোট ভাইকে মারধর করে এবং বাচ্চুর বাবা আপ্তের আলী রিয়াকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যার হুমকি দিয়ে মামলা ওঠাতে বলেন। এ নিয়ে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট সাংবাদিকরা সরেজমিনে গেলে আপ্তের আলী বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবক নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে পাতাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, রিয়া মনি মেধাবী ছাত্রী। তার সাথে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, আপ্তের আলীসহ আসামিদের পরিবারের প্ররোচনায় এলাকার প্রায় শিক্ষার্থীকেই ওই তিন বখাটে উত্ত্যক্ত করে থাকে। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার এস আই আনোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিক তদন্তে ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং তদন্ত চলছে।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদ হোসেন জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযোগটি মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।