জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বখাটের ইভটিজিং ও জোর করে তোলা সেলফিতে গলায় ফাঁস দিয়ে জীবন দিল স্কুলছাত্রী অন্তরা সাহা। সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পোগলদিঘা ইউনিয়নের সাইঞ্চার পাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রিয়াদুজ্জামান (৩০) নামের এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার মূলবাড়ী এলাকার মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে তৌহিদুর রহমান (তানিন তালুকদার) । তৌহিদুর সরিষাবাড়ী টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের ব্যাংকিং বিষয়ে ১ম বর্ষের ছাত্র। সে কসমেটিক ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহার মেয়েকে ছাত্রী অন্তরা সাহা ছোয়াকে (১৪) কে দীর্ঘদিন যাবৎ উত্যক্ত করে আসছিল। অন্তরা সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় এবং কোচিংয়ে আসা যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত তাকে উত্যক্ত করে আসছিল তৌহিদুর । এক পর্যায়ে তৌহিদুর অন্তরাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় তৌহিদুর বন্ধুদের নিয়ে অন্তরাকে নোংরা ভাষায় প্রতিনিয়ত ইভটিজিং করে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে অন্তরা তার পিতাকে জানালে তিনি তৌহিদুরের পরিবারকে বিষয়টি জানান। এ ঘটনায় তৌহিদুর ক্ষিপ্ত হয়ে অন্তরার বাড়িতে ও তার পিতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাড়াবাড়ি করলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়।
অন্তরার বাবা অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়গুলো বখাটের পরিবার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালেও তারা ঘটনা সমাধানে কোন গুরুত্ব দেয়নি। এ বিষয়টি তানিন জানতে পেরে গত ২০ এপ্রিল স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অন্তরাকে ধরে জোর করে মুখচেপে ধরে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলে এবং সেই ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করে। এতে সমাজের উপর বিরক্ত হয়ে উঠে অন্তরা সাহা। সোমবার সন্ধ্যায় আরামনগর মামুন স্মৃতি ক্যাডেট একাডেমি থেকে কোচিং শেষে বাড়িতে গিয়ে ঘরে ঢুকেই অন্তরা দরজা বন্ধ করে দেয়। মা নমিতা রাণী সাহা তাকে না পেয়ে তার কক্ষে খুঁজতে গেলে তার ঘরের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে তাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে বাড়ির লোকজন অন্তরার চাচা কৃষ্ণ সাহার কক্ষের সিলিংয়ের উপর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে অন্তরাকে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত দেখতে পান। পরে পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেপ্লক্সে নিয়ে আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাহেদুর রহমান অন্তরাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে রাতে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মাজেদুর রহমান ও উপ-পরিদর্শক আশরাফুল আলম সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অন্তরার লাশের সুরতহাল করে থানায় নিয়ে আসেন।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মাজেদুর রহমান বলেন, নিহতের পিতা বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।