বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা : ফিরে দেখা - দৈনিকশিক্ষা

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা : ফিরে দেখা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনা একই সঙ্গে বেদনার ও আত্মসমালোচনার। বেদনার এ কারণে যে বাংলাদেশ এই দিনে তার স্থপতিকে হারিয়েছে। আর আত্মসমালোচনার কারণে হলো সেই হত্যাকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হলেও সেদিন অনেকেই তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। যারা মুজিবের রাজনৈতিক অনুসারী ছিলেন, তাদের অধিকাংশ আত্মরক্ষাকেই শ্রেয় মনে করেছিলেন। আর বিরোধীরা দেশ ও গণতন্ত্র উদ্ধারের দায়িত্বটি কতিপয় মেজরের রক্তমাখা হাতে ন্যস্ত করে দারুণ আহ্লাদিত হয়েছিলেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যার পর হত্যাকারীদের উপলব্ধিতে আসে, মুজিবের রক্তস্নাত বাংলাদেশ তাদের জন্য আর নিরাপদ নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র বিয়াল্লিশ দিন পর ১৯৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অরডিন্যান্স বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করেন। এর অর্থ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হবে না। জিয়াউর রহমান তখন সেনাপ্রধান।

‘দ্য বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাক ছাড়াও স্বাক্ষর করেছিলেন তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমান।এই অধ্যাদেশবলে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আইন ও বিচারের আওতামুক্ত রাখা হয়।

পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার পথকে রুদ্ধ করে দেয়।

বাংলাদেশে নেমে আসে এক বিভীষিকা, শুরু হয় এক অ-সাংবিধানিক স্বৈরশাসন। একে একে ধ্বংস হয়, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া বাঙালির সব অর্জন।

সে সময় দেশে জাতির জনকের হত্যা বিচার দাবিতো দূরের কথা,তার নাম উচ্চারণই হয়ে ওঠে দেশদ্রোহিতার নামান্তর। দেশের মাটিতে নজিরহীন এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ এগোয়নি। কিন্তু দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু রহমান,তার পরিবার ও জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনা তদন্তে বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম কমিশন গঠিত হয়।

বাংলাদেশে আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী শন ম্যাকব্রাইডসহ চার ব্রিটিশ আইনবিদ মিলে এ কমিশন গঠন করেছিলেন। তবে অনুসন্ধানের কাজে এ কমিশনকে বাংলাদেশে ভিসা দেয়নি জিয়াউর রহমানের সরকার।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধানে কমিশনের কাছে আবেদন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলীর ছেলে প্রয়াত মোহাম্মদ সেলিম এবং আরেক জাতীয় নেতা এবং সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

১৯৯৬ এ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শুরু হয়। ২১ বছর পর সে বছরের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল হলে ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচারপ্রক্রিয়া।

দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এর মধ্য দিয়ে ১৩ বছর ধরে চলা এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।

পলাতক বাকি পাঁচজন হলেন কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ,লে,কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল এসএইচ নূর চৌধুরী, লে.কর্নেল এ এম রাশেদ  ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী। এর মধ্যে গত ৬ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তিনি এতদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন। পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আত্মস্বীকৃত আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের মধ্যে দুজনকে ফেরানোর ওপর সরকারের এখন সব মনোযোগ। কারণ, অন্য তিনজন কে কোথায় আছেন, তা নিয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ এম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর ব্যাপারে আশাবাদী। আর কানাডায় মৃত্যুদণ্ড প্রথা বিলোপ হওয়ায় এসএইচ নূর চৌধুরীকে ফেরানোটা আটকে আছে আইনি প্রক্রিয়ায়।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0099470615386963